৫৬-তে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস

অপ্রাপ্তি আছে, চবির অর্জনও অনেক

চবি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা মোহনীয় এক ক্যাম্পাসের নাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। পুরো ক্যাম্পাস যেন সবুজের সৌন্দর্যে মোড়ানো। ক্যাম্পাসের বাঁকে বাঁকে রয়েছে জীববৈচিত্র্যের বিশাল সমাহার। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা এই ক্যাম্পাসজুড়ে যেন মৌনতা। সকালে শাটলের আওয়াজে ঘুম ভাঙে এ ক্যাম্পাসের। শাটলের বুকে-পিঠে চড়ে ক্যাম্পাসের পথে পা বাড়ায় হাজারো শিক্ষার্থী।
প্রায় পৌনে ঘণ্টার জার্নি শেষে শিক্ষার্থীরা শাটল থেকে নামতেই যেন আড়মোড়া ভাঙে ক্যাম্পাসের। নির্জীব-নিরব ক্যাম্পাস নিমিষেই যেন ফিরে পায় প্রাণ। দেশের তো বটেই সারা বিশ্বেও বতর্মানে একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সবুজ ঘেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়। হাটহাজারীর ফতেহপুরের জোবরা গ্রামে পাহাড়ঘেরা ২১শ একর সমতল-উঁচু-নিচু পাহাড়ি ভূমিতে ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়।
শুরুর কথা : মাত্র চারটি (বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও অর্থনীতি) বিভাগে ২০৪ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। যাত্রালগ্নে শিক্ষক ছিলেন ৮ জন। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান (এ আর) মল্লিক।
বর্তমান চিত্র : হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৫৫ বছর শেষ করে ৫৬ বছরে পদার্পণ করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। যাত্রালগ্নের চারটি বিভাগের স্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ৯টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৬টি ইনস্টিটিউট, ৫টি গবেষণা কেন্দ্র, অধিভুক্ত অনুষদ ১টি, অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট ১টি এবং অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে ২৫টি। মোট শিক্ষার্থী ২৩ হাজার ৫৫৪ জন। মোট শিক্ষক ৯২৫ জন। কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ২ হাজার।
আবাসন ব্যবস্থা : শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ১৪টি আবাসিক হল। এর মধ্যে ৯টি ছাত্রদের এবং ৫টি ছাত্রীদের। এর মধ্যে তিনটি হল নির্মাণাধীন। আর সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য ২টি ছাত্রাবাস বর্তমানে নির্মাণাধীন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এসব হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন বাসা ও কটেজে থাকছে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী। বাকি শিক্ষার্থী শহরের বিভিন্ন বাসা ও মেসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। শহরে থাকা এসকল শিক্ষার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে একজোড়া শাটল ও একটি ডেমু ট্রেন চালু রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শাটল নিয়ে কিছু তথ্য : শহর থেকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯৮১ সালে চবিতে প্রথম শাটল ট্রেন চালু হয়। বাংলাদেশে তো নয়ই বিশ্বের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েও বর্তমানে শাটলের ব্যবস্থা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা থাকলেও কয়েক বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে সবুজ ঘেরা চবি ক্যাম্পাসই এখন বিশ্বে একমাত্র শাটলের ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দর্শনীয় স্থান : প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বেশ কয়টি দর্শনীয় স্থান। যার মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন, হেলিপ্যাড, ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ, চালন্দা গিরিপথ, জীববিজ্ঞান অনুষদ পুকুর, প্যাগোডা, স্লুইচ গেট, ভিসি হিল, টেলি হিল, হতাশার মোড়, দোলা সরণী ও ফরেস্ট্রি অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্বর, জয় বাংলা ভাস্কর্য, মুক্তমঞ্চ, জারুলতলা, লাইব্রেরি চত্বর ও সুনামি গার্ডেন।
অর্জন : অর্জনেও পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ৫৫ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে অনেক রথী-মহারথীর। বিশ্বখ্যাত ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমিরেটাস জামাল নজরুল ইসলাম এর মধ্যে অন্যতম। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। দেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রাম থেকেই যাত্রা শুরু করে।
টিএসসির অভাব : প্রতিষ্ঠার এতবছর পরও একটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) পায়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিনিয়ত যার অভাব বোধ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আর টিএসসির অভাবে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি ও হল সংলগ্ন ঝুপড়িগুলোই শিক্ষার্থীদের মূল আড্ডা স্থলে রূপ পেয়েছে।
নিরব চাকসু : বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ বছরে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে এবং প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং জিএস আবদুর রব। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। তখন ভিপি নির্বাচিত হন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা নাজিম উদ্দিন, জিএস আজিম উদ্দিন ও এজিএস নির্বাচিত হন মাহবুবুর রহমান শামিম।
সমাবর্তন মাত্র চারবার : ৫৫ বছরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র চারবার। এ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছে সাবেক শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম সমাবর্তন হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় এবং ২০০৮ সালে তৃতীয় সমাবর্তন হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সমাবর্তন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকালে আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে জারুলতলায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ থাকার কথা রয়েছে। এরপর বিকেলে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বছর আগে পিতা হারানো শিশুটি মারা গেল পুকুরে ডুবে
পরবর্তী নিবন্ধনতুন দুই কেন্দ্র চালু হচ্ছে রোববার