৫০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর ৩ হাজার টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

নগরে যে কোনো বৈধ ব্যবসার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতি অর্থবছরে এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে তিন হাজার টাকা উৎসে কর পরিশোধ করতে হয় লাইসেন্স গ্রহীতাকে; যা সর্বনিম্ন লাইসেন্স ফি’র ছয় গুণ।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, এ উৎসে কর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো। চসিকের দাবি, অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের ভয়ে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করতে চান না। এতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। এ অবস্থায় ট্রেড লাইসেন্স ফি থেকে উৎসে কর প্রত্যাহার চায় চসিক। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল সংস্থাটি। মন্ত্রণালয়ও এতে সম্মতি জানিয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পত্র দেয়। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের বিপরীতে যৌক্তিকভাবে শতকরা হিসেবে উৎসে কর ধার্য করা প্রয়োজন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) ৭৮ হাজার ৪২টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে। বিপরীতে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে মাত্র এক হাজার ২২০টি নতুন লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। অবশ্য একই সময়ে নবায়ন হয়েছে ২২ হাজার ৬৬৪টি। সাধারণত অর্থবছরের শুরুতেই নবায়নের হার বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে নবায়নের পরিমাণ কম। অতিরিক্ত উৎসে করের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে মনে করেন চসিকের দায়িত্বশীলরা।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ট্রেড লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। কিন্তু প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে তিন হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হয়। সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এটাকে অনেক ব্যবসায়ী অজুহাত হিসেবে দেখান। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সেটা এনবিআরের বিষয়। তাছাড়া সেটা আইনেও আছে। ব্যবসায়ীদের সেটা মানতেই হবে। তারপরও বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি।
প্রত্যাহার চায় চসিক : ১৩ সেপ্টেম্বর চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর। এতে বলা হয়, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যবসায়ীদের অন্যান্য ফি’র সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত তিন হাজার টাকা হারে আয়কর দিতে হয়। এর ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা আয়করের আওতায় পড়ে না তাদেরও আয়কর দিতে হচ্ছে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অনাগ্রহ সৃষ্টি করছে।
তিন হাজার টাকা আয়করের জন্য সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে পত্রে বলা হয়, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ও সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব অভিযান ও কর্মপন্থার মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স কার্যক্রম তদারক করলেও বিষয়টি ‘অমানবিক’ হয়ে পড়েছে।
চসিকের পত্রে আরো বলা হয়, করোনাকারীন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই নাজুক। এমনকি তাদের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আয়কর প্রদানের বিষয়টি রহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে চসিক।
মন্ত্রণালয়ের সম্মতি : চসিকের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিবকে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পত্র দেয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, উৎসে কর অধিক হওয়ায় ছোট ছোট ব্যাবসায়ীগণ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব আয় ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। সুতরাং ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ফি’র ওপর যৌক্তিকভাবে শতকরা হারে উৎসে কর ধার্য করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর অধীনে প্রণীত আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ অনুযায়ী, চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো তার অধিক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করে। চট্টগ্রামের মতো ঢাকার দুই সিটিতেও ব্যবসার ধরন ভেদে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ট্রেড লাইসেন্স ফি ধার্য আছে। অবশ্য অন্য সিটি কর্পোরেশনগুলোতে এ ফি ৩০০ টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স ফি খাতে উৎসে কর হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের জন্য ২ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে।
জানা গেছে, অর্থ আইন ২০০৭ দ্বারা আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫২ (ক) সংশোধন করে সিটি কর্পোরেশনকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার সময় প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আরও ৫০০ টাকা উৎসে কর বাবদ এনবিআরের অনুকূলে আদায় করা হত। অর্থ আইন ২০১৯-এর ২৭ ধারায় সেই উৎসে কর বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফলে গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে ট্রেড লাইসেন্স ফি’র সাথে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে নগরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
উৎসে করের বিরুদ্ধে গত বছর আপত্তি জানিয়েছিল বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। এছাড়া গত জুনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে উৎসে কর বাতিলের অনুরোধ জানিয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকদমতলীতে চসিকের উচ্ছেদে বাধা, হাতাহাতি (ভিডিও দেখুন)
পরবর্তী নিবন্ধআ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের আহ্বান