২০২৩ সালে আমাদের অর্জন

নুসরাত সুলতানা | শনিবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ at ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিলো যখন নারীদের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে হতো। বাইরের জগতের সাথে নারীদের পরিচিত হওয়ার সুযোগ ছিলো না। কিন্তু সেসব এখন অতীত। কালের বিবর্তনে নারীরা এখন সকল ক্ষেত্রে সফল। যদিও নারীদের জন্য পথটা কখনোই মসৃণ নয়। প্রতিনিয়ত বহু বিচিত্র বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এসব বাধা অনেক বেশি। সব বাধা উপেক্ষা করে নারীরা এখন নিয়মিতই সাফল্যের জয়গান লিখছেন। এই সাফল্য অনেক সময় সারা বিশ্বকেও চমকে দিচ্ছে। আমাদের দেশের অদম্য নারীরা নিজের সাথে সাথে মাথা উঁচু করছেন দেশেরও। প্রতিবারের মতো এ বছরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে আলোচনায় ছিলেন আমাদের দেশের নারীরা। বছর জুড়ে ব্যস্ত থেকে নিজের কাজ দিয়ে, সাফল্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল করেছেন দেশের নাম। নারীরা প্রমাণ করছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায় অনায়াসে। প্রতিবারের মতো এ বছরও নানা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় ছিলেন আমাদের নারীরা, সেরকমই কিছু দৃষ্টান্ত

গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ও সেঁজুতি সাহা

এ বছর এশিয়ার সেরা ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নেন বাংলাদেশের দুই নারী বিজ্ঞানী। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাময়িকী ‘এশিয়ান সায়েন্টিস্ট’এর সেরা এশীয় বিজ্ঞানীদের তালিকায় উঠে এসেছে তাঁদের নাম। তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী ও বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) অণুজীব বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা।

এ বছর ১১ জুন ‘দ্য এশিয়ান সায়েন্টিস্ট ১০০’ শিরোনামে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। অষ্টমবারের মতো করা হয়েছে এই তালিকা। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে হিমবাহ চক্র ও কাঠামোগত ভূতত্ত্ব অনুসন্ধান, এমনকি মহাকাশ গবেষণার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখা গবেষক ও উদ্ভাবকদের বেছে নেয়া হয়েছে এবার।

গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় (জলভূমি পরিবেশবিদ্যা) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ডটিমের একজন বোর্ড সদস্য, যেটি বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করে। গাউসিয়া বাংলাদেশের জলজ বাস্তুতন্ত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রজাতির প্রাণি সংরক্ষণে অবদানের জন্য ২০২২ সালে ওডব্লিওএসডিএলজাইভার ফাউন্ডেশন পুরস্কার পান। এখন জলপথে প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকি বিষয়ে তিনি কাজ করছেন বলে এশিয়ান সায়েন্টিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সেঁজুতি সাহা একজন অণুজীববিজ্ঞানী। জীববিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তিনি। আণবিক জিনতত্ত্বের এই গবেষক কাজ করছেন বাংলাদেশের চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে (সিএইচআরএফ)। সেঁজুতি সাহা ও তাঁর প্রতিষ্ঠান সিএইচআরএফ বাংলাদেশের রোগীদের নমুনা থেকে নতুন করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উন্মোচন করে। শিশুদের আক্রান্ত করে এমন কিছু রোগ, যেমন ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। তিনি বিশ্বে প্রথম দেখান যে, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শিশুদের মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে ও শিশুদের মেনিনজাইটিস রোগ হতে পারে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল পোলিও ইরেডিকেশন ইনিশিয়েটিভের বোর্ড মেম্বার পদে নিযুক্ত হন।

জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি

বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। যে তালিকায় আছেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী আমাল ক্লুনি, এআই বিশেষজ্ঞ তিমনিত গেবরু, নারীবাদের আইকন গ্লোরিয়া স্টেইনেম, হলিউড তারকা আমেরিকা ফেরেরা, ভারতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর ও বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জা। আর এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি। তাঁর সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক অগ্নি দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। এই মর্মান্তিক ঘটনা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি একজন চিত্রনির্মাতা, লেখক ও অধিকারকর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন। ২৬ বছর আগে চুলার আগুনে থমকে গিয়েছিল তাঁর স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তি। তবুও তিনি থেমে ছিলেন না। বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি। তিনি ‘ভয়েস অ্যান্ড ভিউস’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে আসা নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। এ পর্যন্ত ৫টি শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেছেন আইভি। এ ছাড়া তাঁর লেখা ৩টি উপন্যাসও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তাঁর গল্প বলার সহজাত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে চারপাশের মানুষের মাঝে শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ মানুষদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেন। আইভির জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনায়। খুলনার গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল, খুলনা বিএল কলেজে পড়ালেখা করেন। এরপর ইডেন মহিলা কলেজ এবং পরবর্তীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন শিক্ষায় স্নাতকোত্তর করেন। ২০০৯ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন আইভি। এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ও ২০০১ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পাশাপাশি ২০১০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি ও ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন তিনি। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক ও মানবাধিকারকর্মী।

তৌহিদা শিরোপা

ফ্যাশন ও জীবনযাপনবিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ভোগ বিশ্বের ১০০ উদ্ভাবনী উদ্যোগের তালিকা প্রকাশ করেছে। ‘ভোগ বিজনেস ইনোভেটরস: ক্লাস অব ২০২৩’ শিরোনামের এ তালিকায় যৌথভাবে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মুস্তাফিজ উদ্দিন ও তৌহিদা শিরোপা। ভোগ সাময়িকীর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশিত সংস্করণগুলোর সম্পাদকেরা মিলে প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা উদ্ভাবনী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে এই শীর্ষ ১০০ তালিকা করে থাকেন। সামষ্টিক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধুর’ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা সাসটেইনেবিলিটি থট লিডারস শ্রেণিতে ১০০ উদ্ভাবকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তৌহিদা শিরোপার কাজ সম্পর্কে ভোগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘মনের বন্ধু’ তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের স্বল্প খরচে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি নারী ও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্যও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয় ‘মনের বন্ধু’। তিনি শুধু ‘মনের বন্ধু’র প্রতিষ্ঠাতাই নন, তিনি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিশেষ করে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণ সুস্থতা নিশ্চিতের কাজে একজন অগ্রদূত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে যাত্রালগ্ন থেকেই ‘মনের বন্ধু’ পোশাক শ্রমিক, নারী ও তরুণদের জন্য সাশ্রয়ী এবং সুলভ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। এই সেবা দেওয়া হয় কাউন্সেলিং ও কর্মশালার মাধ্যমে। ভোগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মনের বন্ধু’ যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ভালো থাকার উপায় বলে দেয়, তার খরচ প্রতিবার মাত্র দশমিক ২৭ থেকে ৯৪ সেন্ট, অর্থাৎ এক ডলারের কম খরচে ‘মনের বন্ধু’ এই সেবা দিয়ে থাকে। ২০১৬ সালে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লাখ ১০ হাজার মানুষকে দলভিত্তিক সেবা দিয়েছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দুই কোটি পোশাকশ্রমিককে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। ইউএন উইমেন ডব্লিউইপিএস পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন তৌহিদা শিরোপা।

নাজলী হোসেন

এ বছর এশিয়ার শীর্ষ ১০ নারী স্থপতির তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের নাজলী হোসেন। ভারতীয় পত্রিকা ‘ওমেন এন্টারপ্রেনার ইন্ডিয়া’ তাকে ফেব্রুয়ারি২০২৩এ এই সম্মাননা দেন। তিনি বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ভবন নকশার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তিনি ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের স্থপতি এবং বিশ্বব্যাংকের এডিবিসহ দেশিবিদেশি বিভিন্ন প্রকল্পের কন্সাল্টেন্ট হিসেবে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। স্থপতি নাজলী হোসেন ২০০৭ সালে বুয়েট থেকে স্থাপত্যে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করার প্রায় এক যুগ পর নাজলী হোসেন জায়গা করে নেন এশিয়ার শীর্ষ ১০ নারী স্থপতির তালিকায়।

রূপালী চৌধুরী

টাইম ম্যাগাজিনের চলতি বছরের প্রথম সংখ্যায় (জানুয়ারি) জায়গা করে নেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পেইন্টস সল্যুশন ব্র্যান্ড বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী। তাঁর জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়ায়। ১৯৮৪ সালে একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। এরপর যুক্ত হন বার্জারে। দেশের প্রথম নারী হিসেবে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা রূপালী চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই খ্যাতনামা সাময়িকীর পাতায় বাংলাদেশের পেইন্টস ইন্ডাস্ট্রির প্রবৃদ্ধি এবং মার্কেট লিডার হিসেবে বার্জারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তথ্যবহুল আলোচনা উপস্থাপন করেন। বিগত বছরগুলোতে দেশের পেইন্ট ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশের বাজারে যুগান্তকারী উদ্ভাবন নিয়ে আসার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বার্জার। ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বার্জার ও একই সঙ্গে দেশের পেইন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন রূপালী চৌধুরী। বর্তমানে দেশের পেইন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে এক অনন্য প্রবৃদ্ধির ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে রয়েছে ‘বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ’। উন্নত, গুণগত মানসম্পন্ন এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন করে এই খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বার্জারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা দেশের এই খাতসহ সমগ্র অর্থনীতির ভবিষ্যতকে সম্ভাবনাময় করে তুলছে। নিজের লেখায় দেশের বর্ধিত আবাসন ও পুরকৌশল সংক্রান্ত চাহিদার কথা তুলে ধরেন রূপালী চৌধুরী। দেশে উন্নতমানের পেইন্টস সল্যুশনের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ বিষয়ে রূপালী চৌধুরী বলেন, টাইমের মতো খ্যাতনামা একটি সাময়িকীতে আমার ভাবনা তুলে ধরতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। দেশের পেইন্টস ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিস্থিতি এবং এই খাতকে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে বার্জারের বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। সততা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বার্জার। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই লেখা আমাদের দেশের বিবিধ খাত সমূহে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সহায়তা করবে।

মনীষা দাস চৈতী

এ বছর নাসার পুরস্কার পান বাংলাদেশি বিজ্ঞানী গবেষক মনীষা দাস চৈতী। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘ল্যান্ডস্যাট ক্যালিব্রেশন/ভ্যালিডেশন’ দলের হয়ে রবার্ট এইচ গডার্ড পুরস্কার২০২২ পান তিনি। মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এ পুরস্কারকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার তাত্তাকান্দা গ্রামের মেয়ে মনীষা দাস চৈতী। তাঁর বেড়ে ওঠা নরসিংদী শহরে। মনীষা পড়ালেখা করেন খুলনা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতে (কুয়েটে)। বর্তমানে তিনি রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে পিএইচডি করছেন। তিনি একটি এবসলিউট ক্যালিবারেশন মডেল তৈরি করার মাধ্যমে এই প্রকল্পে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এটি সর্বোচ্চ স্তরে সক্রিয় ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট ডাটার গুণমান বজায় রাখতে এবং ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট মিশনের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করার ক্ষেত্রে ক্যাল/ভাল টিমের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট ডাটা পণ্যটি নগর পরিকল্পনা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণসহ বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন খাতে ব্যবহৃত হয়। এ সম্পর্কে ইউএসজিএস ইআরওএস ক্যাল/ভ্যালু’র ম্যানেজার কোডি অ্যান্ডারসন বলেন, ‘এমন অসাধারণ কাজের জন্য অত্যন্ত পরিশ্রমী, নিবেদিত, বড় ও আত্মবিশ্বাসী দলের প্রয়োজন, ল্যান্ডস্যাট ক্যাল/ভাল তেমনই একটি দল’। দলটি নাসা গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে আর্থ রিসোর্সেস অবজারভেশন অ্যান্ড সায়েন্স সেন্টার (ইআরওএস), সাউথ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা এবং নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি নিয়ে গঠিত। তিনি আরো জানান, দলটি পরবর্তীতে ল্যান্ডসেট নেক্সট মিশনের জন্য পরিকল্পনা করছে। এমন মর্যাদাপূর্ণ একটি পুরস্কারের অংশ হতে পেরে মনীষা দাস চৈতী জানান, এটি আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। সামনের দিনগুলোতে এটি আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।’ এ ছাড়া তিনি মহাকাশবিজ্ঞানে আগ্রহী দেশের শিক্ষার্থীদের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এই অর্জন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরকেও মহাকাশ বিষয়ক পড়াশোনায় অনুপ্রেরণা জোগাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅলীক সুখ
পরবর্তী নিবন্ধউত্তর জেলা ছাত্রদলের লিফলেট বিতরণ