১৫ লাইটার জাহাজ কোথায়

আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেনি ।। অবস্থান জানতে ডব্লিউটিসিকে কাস্টমসের চিঠি ।। জানে না ডব্লিউটিসিও

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ নভেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বিদেশ থেকে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার পণ্যের শুল্ক পরিশোধ না করা ১৫টি লাইটারেজ জাহাজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম কাস্টমস জাহাজগুলো খুঁজছে। গতকাল এসব জাহাজের অবস্থান জানতে চেয়ে কাস্টমসের পক্ষ থেকে লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নিকট জরুরি পত্র দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাবে ডব্লিউটিসি ওইসব জাহাজের ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে আট মিটার ড্রাফট ও ১৯২ মিটারের বেশি লম্বা জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। এই ধরনের জাহাজে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টন পণ্য বহন করতে পারে। এর থেকে বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজগুলোকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বহির্নোঙরে অবস্থান করে পণ্য খালাস করতে হয়। আবার কিছু কিছু জাহাজ ড্রাফট কমানোর জন্যও বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করে। বহির্নোঙরে বর্তমানে বছরে ৯শর বেশি মাদার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং হয়। এসব জাহাজে অন্তত ৬ কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় কিছু আমদানিকারকের নিজস্ব লাইটারেজ জাহাজে নিজেদের পণ্য পরিবহন করে। এর বাইরে সাধারণ আমদানিকারকদের আমদানিকৃত কয়েক কোটি টন পণ্য ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণাধীন লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। ডব্লিউটিসি প্রতিদিন বার্থিং সভা করে আমদানিকারকদের চাহিদার বিপরীতে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠানগুলো বহির্নোঙরে অবস্থানকারী মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য লাইটারেজ জাহাজে দেয়ার আগে শুল্ক পরিশোধসহ কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হয়। শুল্ক পরিশোধ ছাড়া মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য লাইটারেজ জাহাজে নামানোর সুযোগ থাকে না। তবে প্রভাবশালী কিছু আমদানিকারক নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে শুল্ক আইনের ৭৮ ধারায় শুল্ক পরিশোধ না করে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করে। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, কাস্টমসের শুল্ক পরিশোধের পরই কেবল লাইটারেজ জাহাজ থেকে পণ্যগুলো ঘাটে নামানো যাবে। শুল্ক পরিশোধ না করা পর্যন্ত এসব জাহাজ কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে সাগরে অবস্থান করবে। বিভিন্ন সময় শুল্ক আইনের ৭৮ ধারার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ১৫টি লাইটারেজ জাহাজের খোঁজ পাচ্ছে না। জাহাজগুলোর বিষয়ে জানতে কাস্টমস কর্মকর্তারা গতকাল ডব্লিউটিসিতে চিঠি দিয়েছে।
১৫টি লাইটারেজ জাহাজ হচ্ছে, এমভি ক্রাউন মেরিনার্স-৪, এমভি ক্রাউন মেরিনার্স-৫, এমভি ক্রাউন মেরিনার্স-৬, এমভি ক্রাউন মেরিনার্স-৭, এমভি সাহাবা-১১, এমভি সাহাবা-১২, এমভি সাহাবা-১৩, এমভি সাহাবা-১৪, এমভি সাহাবা-১৫, এমভি সাহাবা-১৬, এমভি প্রিন্সেস মাইসা পারিসা, এমভি লামিসা-১, এমভি মিতিলা সালমান-৯, এমভি নুহুরতরী ও এমভি ইশরাত জাহাজ-২। উপরোক্ত জাহাজগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আরজিন খাতুন গত ৩১ অক্টোবর ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির জবাবে ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ খান গতকাল কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, ১৫টি জাহাজের ব্যাপারে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
ডব্লিউটিসি জানায়, তারা আমদানিকারক প্রতিনিধি, লাইটার জাহাজের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রতিদিন বার্থিং সভার মাধ্যমে লাইটার জাহাজের সব কাগজপত্র আমদানিকৃত পণ্যের ডিউটি, এঙাইজ ডিউটি, সার্ভিস ট্যাঙ এবং সম্পূরক শুল্কসহ শুল্কায়নের সব ধরনের কাগজপত্র, ভ্যাট ও বন্দরের পাওনা পরিশোধের প্রমাণ দেখার পরই লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দ-পরবর্তী লাইটার জাহাজ মাদার ভ্যাসেল থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী পণ্য বোঝাই নিচ্ছে কিনা, যাত্রাপথে কোনো সমস্যা বা কোনো স্থানে অবস্থান করছে কিনা এবং আনলোডিং পয়েন্টে সিরিয়াল মোতাবেক পণ্য খালাস হচ্ছে কিনা এসব বিষয় ডব্লিউটিসি মনিটরিং করে। এছাড়া এই সংস্থা সার্ভেয়ারের মাধ্যমে লাইটার জাহাজে চোরাই পণ্য লোড দেয়া হয়েছে কিনা তা-ও মনিটরিং করে।
চিঠিতে বলা হয়, আমদানিকৃত পণ্য লাইটারেজ জাহাজে বোঝাই থেকে শুরু করে আমদানিকারকের প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত সব কার্যক্রমই এই মনিটরিংয়ের আওতায় থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ফ্যাক্টরি মালিক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ডব্লিউটিসির সিরিয়াল প্রথা হতে জাহাজ বরাদ্দ না নিয়ে নিজেদের মতো করে লাইটার জাহাজ ভাড়ার চুক্তিতে নিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যায়। রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের তৎপরতা চলে বলে চিঠিতে বলা হয়। এর ফলে নৌ পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা ও অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। সরকারও বিভিন্নভাবে রাজস্ব হারাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সাথে কিছু শিপিং এজেন্টস এবং স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান জড়িত।
কাস্টমসের চিঠির জবাবে ডব্লিউটিসি বলেছে, পত্রে উল্লেখিত জাহাজসমূহ দীর্ঘদিন ধরে অত্র সংস্থার সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন আমদানিকারক ও ফ্যাক্টরির সাথে ভাড়ার চুক্তিতে পণ্য পরিবহন করছে। এসব জাহাজের অবস্থান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে ডব্লিউটিসির কাছে কোনো তথ্য নেই।
ডব্লিউটিসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, প্রচলিত নিয়মের মধ্যে চলাচল করলে জাহাজগুলোর এভাবে লাপাত্তা হওয়ার সুযোগ থাকত না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোনো কাজ ছোট নয়, সব কাজে প্রস্তুত থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধপৃথিবীতে বিদ্যুৎ দেবে মহাকাশে বসানো সোলার প্যানেল?