যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়ার পরদিনই মুক্তি পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। ৭৩ বছর বয়সী আজহার কারা তত্ত্বাবধানে ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিয়াক ব্লকে ছিলেন। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার একেএএম মাসুম জানান। খবর বিডিনিউজের।
আনুষ্ঠানিক মুক্তির পর এ টি এম আজহারকে ফুলেল সংবর্ধনা দিয়ে একটি কালো রঙের এসইউভিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগে। সেখানে হাজির হয়ে তিনি ধন্যবাদ দিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের নায়কদের। সেখানে রাস্তা আটকে চারটি ট্রাকের উপর নির্মাণ করা সমাবেশ মঞ্চে ওঠেন আজহার। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা আগে থেকেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চের সামনে তখন কয়েক হাজার মানুষ। শফিকুর ফুল দিয়ে মঞ্চে বরণ করে নেন দলের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারকে। সভামঞ্চে বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে আজহার বলেন, প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজকে সকালে মুক্তি পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি স্বাধীন নাগরিক একজন।
২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন। মুক্ত আজহার বলেন, আমি সর্বপ্রথম আমাদের মহান আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায়বিচার ছিল না। আদালতকে ব্যবহার করা হয়েছে। এইজন্য আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী… তারা জনগণ ন্যায়বিচার যাতে পায়, সেই ব্যবস্থায় তারা করবেন।
আজহার তার আইনজীবী দলের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তবে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেন গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের, যাদের কারণে বাস্তবতা বদলে গিয়ে তার মুক্তির পথ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, সেই ছত্রিশে জুলাই, অর্থাৎ পাঁচই আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্দোলন, তাদের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হতে বাধ্য হয়েছিল। সবচেয়ে আমি ধন্যবাদ জানাব এই ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজকে। যারা অতীতের অহংকার গর্বকে আবার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। ছাত্র সমাজই রাজপথে নেমে রক্ত ঢেলে এই চৌদ্দ পনেরো বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণকের সাথে নিয়ে তারা রাজপথে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যার কারণে দম্ভ সব চূর্ণ হয়ে বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, তারা জনগণের পক্ষ নেওয়ার কারণেই বাংলাদেশ এ অবস্থায় আসতে সক্ষম হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া এবং বিচারাধীন অবস্থায় কারাগারে মারা যাওয়া জামায়াত নেতাদের নাম একে একে স্মরণ করে আজহার বলেন, আমি স্মরণ করছি অত্যন্ত দুঃখবেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, যারা আমার নেতা ছিলেন। তাদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে তাদের। সেজন্য বিচার চেয়ে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই যে পর্যায়ে জড়িত, সবাইকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করা হোক। না হলে খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকে। জামায়াতের এই জ্যেষ্ঠ নেতা কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, জান্নাত পাওয়ার একটাই মাত্র পথ, তা হল শাহাদৎ বরণ করা। তো শাহাদাতই আমাদের জান্নাত দিতে পারে। তাই যে দল, যে জাতি, যে ব্যক্তি শাহাদাৎ তামান্না পেয়ে এগিয়ে যায়, সেই দল সে জাতিকে কেউ দমাতে পারে না।
শোকরানা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটা কোন সভা না। মজলুম নেতার প্রাথমিক অভিব্যক্তি ব্যক্ত করার একটা আয়োজন ছিল। আমাদের এই ভাইয়ের বক্তব্য অচিরেই আরও বড় পরিসরে এই ঢাকায়ই শুনব ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, এ দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় ফ্যাসিবাদি সরকারের পতন হয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন শোকরানা সমাবেশে।