১২ লাখ টন পণ্য বোঝাই লাইটারেজ আটকা

বহির্নোঙরে অপেক্ষায় ৩৭ মাদার ভ্যাসেল বন্দরে জাহাজজটের শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ অক্টোবর, ২০২০ at ৭:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ১২ লাখ টনেরও বেশি পণ্য বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ আটকা পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘাটে ঘাটে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে অলস বসে আছে এসব জাহাজ। অপরদিকে ১৪ লাখ টনেরও বেশি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অলস বসে আছে ৩৭টি মাদার ভ্যাসেল। নৌযান ধর্মঘট লাগাতার হলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নৌযান ধর্মঘটের প্রথম দিনেই দেশের আমদানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।
সূত্র জানায়, খোরাকি ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট শুরু হয়। সোমবার রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ঢাকার বিআইডব্লিউটিএ ভবনে দফায় দফায় বৈঠক হলেও সংকটের সুরাহা হয়নি। নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরের বহির্নোঙরে সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি দল সমর্থিত নৌযান শ্রমিকদের ছয়টি পৃথক সংগঠন নতুন মোর্চা গঠন করে আন্দোলনে যাওয়ায় এবারের আন্দোলন কিছুটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। ফলে দেশের আমদানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে আট মিটার ড্রাফট ও ১৯২ মিটারের বেশি লম্বা জাহাজ প্রবেশ করতে পারে না। এই ধরনের জাহাজ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টন পণ্য বহন করতে পারে। এর বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে হয়। কিছু কিছু জাহাজ ড্রাফট কমানোর জন্যও বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বর্তমানে বছরে নয়শ’র বেশি মাদার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং হয়। এসব জাহাজে অন্তত ছয় কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল। বন্দরের জেটিতে নোঙর করা জাহাজের ওভার সাইট থেকেও বিপুল পরিমান পণ্য এসব লাইটারেজ জাহাজে পরিবহন করা হয়। হাজার দুয়েক লাইটারেজ জাহাজ এই বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করে। এরমধ্যে ১৩৫০টি জাহাজ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নিয়ন্ত্রনে চলাচল করে। এছাড়া দেশের বড় বড় শিল্পগ্রুপ এবং আমদানিকারকদের নিজেদের নিয়ন্ত্রনে সাড়ে ছয়শ’র মতো জাহাজ রয়েছে।
ধর্মঘটে সারাদেশে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানিকারকদের হাজার কোটি টাকার পণ্য নিয়ে জাহাজ আটকা পড়েছে। গতকাল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্র জানায়, সারাদেশের ৩৮টি ঘাটে ৮৮৪টি লাইটারেজ জাহাজ ১২ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৮ টন পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকেরা কাজ না করায় প্রতিটি জাহাজেরই হ্যাজ বন্ধ রয়েছে। ঘাটে জাহাজ থাকলেও কোন জাহাজ থেকেই কোন পণ্য নামানো সম্ভব হয়নি। জাহাজগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম, ভুট্টা, ডাল, সার, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে ৩৭৬ টি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে।
ডব্লিউটিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ১৯টি মাদার ভ্যাসেলে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬২৭ টন পণ্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বড় আমদানিকারক ও শিল্পগ্রুপের আমদানিকৃত ৯ লাখ ৫ হাজার ৩৪১ টন পণ্য নিয়ে ১৮টি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ে আছে। ৩৭টি মাদার ভ্যাসেল আটকা পড়ায় প্রতিদিনই দেশের আমদানিকারকদের অন্তত সাড়ে ছয় কোটি টাকা ফিঙড অপারেটিং কস্ট বাবদ গচ্ছা দিতে হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজের কার্যক্রম শুরু না হলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমান এই ৩৭টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস সম্ভব হবে না। প্রতিদিনই অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ধর্মঘটের কারণে বন্দরের বহির্নোঙরে শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপণ্য খালাস বন্ধ হয়ে গেছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল না করায় সারা দেশে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় নতুন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বৃদ্ধি ও ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়বে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। খেসারত দিতে হবে দেশের সাধারণ ভোক্তাদের। বৈশ্বিক মহামারীর এই দুর্দিনে আর্থিক সংকটে জর্জরিত সাধারণ মানুষ নৌযান ধর্মঘটের কারণে নতুন সংকটের মুখে পড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার
পরবর্তী নিবন্ধজলদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় নারী ও শিশুসহ আহত ৮