অবাক করা আবিষ্কারের আভাস মিলেছে নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা ছবিতে। পৃথিবীর সৌরমণ্ডলের বাইরে একটি গ্রহের আকাশে দেখা গেছে মেঘ আর কুয়াশা। অথচ আগে ভাবা হত তপ্ত ওই গ্রহের আকাশ বুঝি একেবারে পরিষ্কার। খবর বিডিনিউজের।
স্পেস ডটকম জানিয়েছে, সৌরমণ্ডলের বাইরের গ্রহকে বলে এঙোপ্ল্যানেট। নাসা এ গ্রহের নাম দিয়েছে ডব্লিউএএসপি-৯৬বি। এই এঙোপ্লানেটটিও সূর্যের মত একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। মূলত হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত বলে এসব গ্রহকে বলে ‘গ্যাস দানব’।
এ ধরনের গ্রহের মধ্যে যেগুলো নক্ষত্র থেকে দূরত্ব আর পৃষ্ঠদেশের অতি উষ্ণতার কারণে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির মত দেখতে, জ্যেতির্বিদরা সেগুলোকে বলেন ‘হট জুপিটার’। ডব্লিউএএসপি-৯৬বি এরকম একটি হট জুপিটার। ডব্লিউএএসপির পুরো অর্থ দাঁড়ায় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সার্চ ফর প্ল্যানেট। এই এঙোপ্ল্যানেট ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে।
প্রথম দফায় ওয়েব টেলিস্কোপ সেসব বৈজ্ঞানিক উপাত্ত দিয়েছে, তার সাপেক্ষেই নাসা ডব্লিউএএসপি-৯৬বি গ্রহের সঞ্চারণশীল বর্ণালি বা তরঙ্গ প্রকাশ করেছে।
নাসা জানিয়েছে, গত দুই দশকে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা অসংখ্য গ্রহের বাতাবরণ থেকে উপাত্ত নিয়ে নিরীক্ষা করে দেখেছে। এরই এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে ডব্লিউএএসপি-৯৬বি গ্রহে প্রথম জলের সন্ধান মিলেছিল।
এরপর জেমস ওয়েবের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানি, মেঘ আর কুয়াশা থাকার প্রমাণ পেয়েছেন তারা। আর এই আবিষ্কারে পৃথিবীর বাইরে বসতি গড়ার সম্ভাব্য ধারণা যেন হালে আরও পানি পেল।
ওয়েবের উপাত্ত থেকে গবেষকরা ওই গ্রহে কী পরিমাণ জলকণা রয়েছে তা জানার চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে জানা যাবে গ্রহে কার্বন ও অঙিজেনের উপস্থিতি ও বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা। এসব তথ্য থেকে জানা সম্ভব হবে কীভাবে, কখন এই গ্রহের জন্ম হয়েছিল।
সূর্যের কক্ষপথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিকিরণ থেকে লাখ লাখ মাইল দূরে ল্যাগরেঞ্জ বিন্দু ২ এ বসানো জেমস ওয়েব নিরবচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারছে ও স্পষ্ট উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারছে। তাতে তুলনামূলক দ্রুততার সাথে গবেষণা এগিয়ে নেওয়া যাবে বলে নাসা আশা করছে।
২০১৮ সালে চিলিতে বসানো ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) দৃশ্যমান আলোর মাধ্যমে ডব্লিউএএসপি-৯৬বি গ্রহে সোডিয়ামের অস্তিত্ব পেয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, ওই গ্রহে মেঘের কোনো ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি।
এখন ওয়েব টেলিস্কোপ পুরনো সেই গবেষণাকে একেবারে উল্টে দিয়েছে, আর তাতে অবাক হয়েছেন জ্যোতির্বিদরাও। এই এঙোপ্ল্যানেটের ধরন বুঝতে এবার তারা পুরনো তথ্যের পাশাপাশি ওয়েবের সংগ্রহ করা তথ্য নিয়েও বিশ্লেষণ করছেন।