১০৬ বছরের দুঃখ ঘুচবে কুমারী ছড়ার বাঁধে

নির্মাণ কাজ শুরু

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর আমন ও শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো প্রায় তিনশ কৃষক পরিবারকে। এসব কৃষক এক প্রকার বাধ্য হয়ে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে ওই ফসলি জমির পাশ দিয়ে প্রবহমান কুমারী ছড়ার ফাঁসিয়াখালী অংশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে মিঠা পানির সংস্থান করতেন। কিন্তু প্রতিবছর এটা করতে গিয়ে তাদের একটি মোটা অংকের টাকা সেচ বাবদ খরচ হয়ে যেতো। তবে তাদের সেই সমস্যা এখন অতীত হতে চলেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে এবার কুমারী ছড়ায় (খাল) মাটির বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অধীনে পরিচালিত সিএনআরএস (সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডি) নামক একটি দেশীয় এনজিও।

ভুক্তভোগী কৃষক এবং কৃষিবিভাগ জানায়, দীর্ঘ ১০৬ বছর ধরে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাজারবিল, নোয়াপাড়া, দক্ষিণ নোয়াপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার প্রায় তিন শতাধিক কৃষক পরিবার তাদের প্রায় ৫০০ হেক্টর আবাদী জমিতে ফসল ফলানো নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকত। তারা নিজেদের পকেটের টাকায় প্রতিবছর কুমারী ছড়ায় ফাঁসিয়াখালী অংশে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে সেচ সমস্যা সমাধান করতে পারলেও ফসল বিক্রির টাকার একটি অংশ বাঁধ নির্মাণে খরচ করতে হতো।

নোয়াপাড়ার কৃষক আবু সালাম বলেন, রাজারবিল মৌজায় আমার সাড়ে ৬ কানি ফসলি জমি রয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে সেচ সমস্যা দূর হয়েছে। দীর্ঘ ১০৬ বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা এই সমস্যার সম্মুখীন ছিলেন। একই কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ নোয়াপাড়ার কৃষক আবুল কালাম। তিনি বলেন, আমার ১০ কানি জমিতে ধান ও রকমারি সবজির আবাদ হবে নির্বিঘ্নে। এতে সেচ বাবদ বাড়তি এক টাকাও খরচ হবে না।

সিএনআরএস এনজিও সংস্থার চকরিয়া উপজেলা সমন্বয়কারী প্রকৌশলী এম ডি শফিকুল আলম আজাদীকে জানান, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত। সারাদেশে কৃষকদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা কৃষি বিভাগের অনুরোধে ফাঁসিয়াখালীর কৃষকদের সেচ সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে কুমারী খালের ছড়ায় মাটির বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই বাঁধের কাজ শেষ হবে। তিনি জানান, স্কিলওয়ে পদ্ধতিতে মাটির বাঁধ নির্মাণের ফলে চাষাবাদের জমিতে যে পরিমাণ মিঠাপানির প্রয়োজন হবে সেই পানিই জমিতে যাবে। বাকি পানি ছড়া দিয়ে ভাটির দিকে নেমে যাবে। এতে ছড়ায় ধরে রাখা পানির পরিমাণ বেশি হলেও বাড়তি কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না কৃষককে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, ফাঁসিয়াখালীতে কুমারী ছড়ার ওপর মিনি স্লুইচ গেট নির্মাণ হলে স্থায়ীভাবে সমস্যা দূর হতো কৃষকের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি না থাকায় স্লুইচ গেটের পরিবর্তে সেখানে স্কিলওয়ে পদ্ধতিতে মাটির বাঁধ নির্মাণ করছে সিএনআরএস। এজন্য সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে চলছে পাহাড় কাটা প্রশাসনের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না
পরবর্তী নিবন্ধপোশাক শিল্পের সংকট মোকাবেলায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন