করোনার প্রভাবে পরিবহন সংকটের অজুহাতে চাষীদের কাছ থেকে কেজি প্রতি তিন টাকা এবং মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে টমেটো কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে রাগ আর ক্ষোভে চাষীদের মাথায় হাত।
চাষীরা বলছেন, প্রতি বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও তারা প্রাপ্য দাম পাচ্ছেন না। পাইকাররা বলছেন, পরিবহন সংকট ও শহুরে ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনছেন বলেই দাম পড়ে গেছে। আর টমেটোর মৌসুম এখন শেষের দিকে হওয়ায় চাহিদাও কম। গতকাল বৃহস্পতিবার সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের টমেটো চাষীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিঘার পর বিঘা জমিতে টমেটো চাষীরা চাষ করলেও প্রাপ্য মজুরি হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক চাষী ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে ভাল দামের আশায় রাস্তার পাশে ঝুড়ি ভরে রেখেছেন। আবার অনেক চাষী ক্ষোভ নিয়ে পুরো জমি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, কেউ যদি ছিঁড়ে নিতে পারে তবে নিয়ে যাক। যার কোনো মূল্যই পাচ্ছি না, আমরা তা ছিঁড়েও লাভ নেই।
করোনা আতঙ্ক আর লকডাউনের কারণে জনসমাগম কম হওয়ায় বেচা-বিক্রি বন্ধ রয়েছে। সামনে সবকিছু সচল হলে আর কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পাইকার নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, কয়েকটা দিন যাক। তখন ভাল দামে নিতে পারব, এখন পরিবহন সংকট আর বিক্রি করতে পারব কিনা সন্দিহান। তাই ঝুঁকি নিয়ে একটাকা দিয়ে কিনছি।এদিকে, ভালো মুনাফার আশায় উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের বশরতনগর গ্রামের সবজি চাষী মো. ফারুক তার দুই বিঘা জমির পুরোটাতেই টমেটোর চাষ করেছিলেন। একই গ্রামের মো. শাহজাহান ও মারুফ মিয়াও এক বিঘা করে জমিতে টমেটো চাষ করেন। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে এসে টমেটোর দাম একেবারে কমে যাওয়ায় এখন তাদের মাথায় হাত।
চাষী মো. শাহজাহান বলেন, তিন কেজি চালের দামে এক মণ টমেটো পাওয়া যাচ্ছে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছে না কেউ। এতে করে আমাদের উৎপাদিত কষ্টের ফসল জমিতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। তাই বলে দিলাম যার যার ইচ্ছেমত জমি থেকে তুলে নিতে।
চাষী মো. ফারুক বলেন, দুই বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ টাকার মত। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম টমেটো বিক্রি করে সংসারের অভার দূর করবো। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা এখন উল্টো লোকসান হচ্ছে।
তারা আরও জানান, গত মঙ্গলবার স্থানীয় হাটবাজারে প্রতিমণ টমেটো ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ আজকে বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা আকার দেখে ১০০ থেকে ১২০ টাকার উপরে উঠছেন না। এই টাকায় জমি থেকে টমেটো তোলা শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহনের খরচও উঠছে না। শুরুর দিকে টমেটোর বাম্পার ফলনে চাষীদের মুখে হাসি ফুটলেও শেষের দিকে এসে তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলার ১২০হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। তাছাড়া টমেটোর পাশাপাশি অন্যান্য সবজির চাষও হয়েছে আরও ১৫০হেক্টর জমিতে।
বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, করোনা মহামারীতে সারাদেশ এখন লকডাউন। তাই বেপারিরা চাহিদামত টমেটো বা সবজি কিনতে পারছেন না। অনেক সময় পরিবহনও পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাষীদের দাম না দেয়ার কথাটি সত্য নয়, আমি গতকালকেও বাজার মনিটরিং করে দেখেছি; খুচরায় ১০ থেকে ১২টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সে তুলনায় পাইকারিতে মণপ্রতি ৭/৮শ’ টাকা হওয়ার কথা। করোনা আতঙ্ক এবং সবকিছু পুনরায় সচল হলে টমেটোর দাম পুনরায় ৪০থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে বিধায় কৃষকদের আর অসুবিধা হবে না।