হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় : মানব চেতনার কবি

| মঙ্গলবার , ২৪ মে, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ঊনিশ শতকের অন্যতম খ্যাতিমান কবি। স্বদেশপ্রেম, মানবধর্মী বৈশ্বিক চেতনা আর উদার মূল্যবোধসম্পন্ন বিবেক তার চেতনায় ও লেখক সত্তায় অন্তর্লীন হয়েছে। আজীবন স্বাধীন ভারতের সংহতির স্বপ্ন দেখেছেন তিনি। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৩৮ সালের ১৭ এপ্রিল হুগলির গুলটিয়ায়। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কিছুকাল মিলিটারি অডিটর-জেনারেল অফিসে কাজ করেন।

ক্যালকাটা ট্রেনিং অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে ওকালতি পেশায় সম্পৃক্ত হন। তবে এইসব পরিচয় ছাপিয়ে হেমচন্দ্রের প্রধান পরিচয় একজন যশস্বী কবি হিসেবে। তার রচনায় দেশপ্রেমের পাশাপাশি সমাজের কুসংস্কার ও প্রথাবদ্ধতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। সমাজ ও দেশের অচলায়তন ভাঙার স্বপ্ন দেখা কবি নারীমুক্তির পক্ষে ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। তার কবিতায় সেই সুর ধ্বনিত হয়েছে। এমনকি হিন্দু সমাজে বিধবা নারীর প্রতি নির্দয় নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধেও কবিতা ছিল তার হাতিয়ার। হেমচন্দ্র রচিত সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দুই খন্ডে রচিত ‘বৃত্রসংহার কাব্য’।

পৌরাণিক কাহিনির মাধ্যমে এই কাব্যে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে: ‘ভারতবিলাপ’, ‘কালচক্র’, ‘বীরবাহুকাব্য’, ‘রিপন উৎসব’, ‘ভারতের নিদ্রাভঙ্গ,’ ‘গঙ্গা, জন্মভূমি, দশমহাবিদ্যা’, ‘চিন্তাতরঙ্গিণী, ‘আশাকানন’, দান্তের ‘দি ডিভাইন কমেডি’র অনুসরণে রচিত ‘ছায়াময়ী’ ইত্যাদি। ১৮৭২ সালে ‘এডুকেশন গেজেট’ পত্রিকায় হেমচন্দ্রের ‘ভারত সঙ্গীত’ কবিতাটি ছাপা হলে কবি এবং সম্পাদক দুজনই সরকারের রোষানলে পড়েন। এই কবিতায় সরাসরিভাবে সকল পরাধীনতা, সব ধরনের অচলায়তন ও অবক্ষয়ী মূল্যবোধের নিগড় থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত হবার আহ্‌বান জানিয়েছেন কবি। স্বদেশ চিন্তা ও সমাজ ভাবনা আশ্রিত তাঁর সকল রচনাই বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। ১৯০৩ সালের ২৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হোন