হেদায়াত ও রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

মহামান্বিত সত্তা আল্লাহতায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন অত্যন্ত সুন্দর অবয়বে শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে। কিন্তু সেই মানুষ সৃষ্টির পরপরই বিভিন্ন ফেতনা-ফাসাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহতায়ালার এক অপূর্ব সৃৃষ্টি মানুষ। মানুষকে দিয়েছেন অগাধ জ্ঞান- সেই মানুষ সৃষ্টির রহস্য বের করতে গিয়ে অনেক গবেষণা কর্ম করে নিজেকে যথেষ্ট উপযোগী করে তুলে। আল্লাহর উপর বিশ্বাসী সেই মানুষটি এই বিশাল সৃষ্টির রহস্য খুঁজতে গিয়ে নিজেই হারিয়ে যায় অথৈ সাগরে। আর সেটাই তাঁর কালামে পাকে এভাবেই বলছেন, ‘নিসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীেেনর (নিখুঁত) সৃষ্টি এবং দিবা রাত্রির আবর্তনের মাঝে জ্ঞানবান লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এই সৃষ্টি নৈপুণ্য) সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে (এবং এসব দেখে তারা বলে), হে আমাদের রব, (সৃৃষ্টি জগত)-এর কোনো কিছুই তুমি অযথা পয়দা করোনি, তুমি অনেক পবিত্র, অতপর তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে নিষ্কৃতি দাও’- সূরা- ইমরান ১৯০,১৯১। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আল্লাহতায়ালার এই সৃষ্টিকে অস্বীকার করছে কিছু মানুষরূপি শয়তান নিরন্তরভাবে আর তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ আযাব। সৃষ্টির পর যখন মানুষ এই বিশাল পৃথিবীটাকে চিনতে শুরু করে, বিভিন্ন মতবাদে নিজের বিশ্বাসকে একাকার করে তোলে আর সেই মহান সত্তাকে অস্বীকার করে নিজেকে কুফরিতে নিমজ্জিত করার কাজটা সেরে ফেলে তখন তাঁর কপালে জোটে নির্মম বাস্তবতা। আর সেটি কোরআন এভাবেই বলছে, ‘এ মানুষগুলো কি দেখে না যে, আমি তাদের একটি (ক্ষুদ্র) শুক্রকীট থেকে পয়দা করেছি, অথচ (ক্ষুদ্র কীটের) সে (ক্ষুদ্র মানুষটিই একদিন আমার সৃষ্টির ব্যাপারে) খোলাখুলি বিতন্ডাকারী হয়ে পড়লো’- সূরা- ইয়াসিন- ৭৭। মহান আল্লাহতায়ালা ১৪০০ বছর আগেই শেষ নবী, নবীকূল শিরোমণি, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর কোরআন নামক যে গাইড লাইন দিয়েছেন তা পূর্ণ অনুসরণ না করার কারণে আল্লাহতায়ালা মাঝে মধ্যে এই জাতির অবচেতন মনকে জাগ্রত করার জন্যে কিছু আযাব দিয়ে থাকেন। তাঁর মধ্যে চলমান আযাব করোনা সেদিকেই ইংগিত বহন করছে। করোনা যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো জীবাণু সৈন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু আমাদের মাঝে কতটুকু উপলব্ধি হয়েছে-এই বিশ্লেষণটি আসা দরকার। এই জমিনের মাঝে আল্লাহর পাঠানো ফরজ বিধানসমূহ বার বার উপক্ষিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিদায় হজ্বের ভাষণে যে সর্বশেষ মেসেজ আমার রাসূল (সাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে দিয়েছেন তারপরে শরীয়তের বিধানের সাথে অন্য কিছু সংযোজন বা বিয়োজন কুফরীর নামান্তর। স্পষ্টভাবে সেই মহান সত্তা ঘোষণা করছেন এভাবেই, ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নেয়ামতও আমি পুরো করে দিলাম, তোমাদের জন্যে জীবন বিধান হিসাবে আমি ইসলামকেই পছন্দ করলাম’- সূরা মায়েদা – ০৩। কিন্তু এই আয়াত নাযিলের পরও আমরা কিছু কপাল পোড়া মুসলমান এই দ্বীনের সাথে অনেক কিছু সংযোজন করে বেদায়াত প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালাই। আর যারাই এই বেদায়াতকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং প্রতিষ্ঠা করে তাদের আমার রাসূলের কাছ থেকে সেই কঠিন হাশরের দিনে হাউজে কাউছারের পানি পান করার সৌভাগ্য হবে না। হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রা) কয়েকজন ছাহাবী (রা) হতে বর্ণনা করেছেন-নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, কতিপয় উম্মত হাউজে কাউসারের কাছে আমার নিকট হাজির হবে। আর তাদেরকে হাউজ হতে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, হে মাবুদ! এরা তো আমার উম্মত। আল্লাহ বলবেন, তুমি জান না, তোমার পরে যে এরা কতসব নতুন নতুন কথা ও কাজ সৃষ্টি করেছিল আর ইসলাম ত্যাগ করে পূর্বাবস্থায় ফিরে মুর্তাদ হয়ে গিয়েছিল। সহীহ্‌ বুখারী (৬১৩০)। ইসলামকে পরিপূর্ণ বিধান হিসাবে আল্লাহতায়ালা আমাদের কাছে পাঠানোর পরও যারা ইসলামের সাথে বেদয়াত ও শিরকের সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছে তাদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার কোরআনের পাতায় পাতায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সূরা আত্‌ তীন এর ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘অবশ্যই আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে পয়দা করেছি, তারপর (অকৃতজ্ঞতার কারণে) আমি তাকে সর্বনিম্নস্তরে নিক্ষেপ করবো’। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে এতই ভালবাসেন যে, তিনি প্রতিরাতের প্রথম অংশ অতিক্রান্ত হওয়ার পর সপ্তম আসমানে নেমে আসেন এবং তাঁর বান্দাদের আহ্বান জানাতে থাকেন যে, কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাও-আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করবো। বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো’। এখানে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। যেমন কথাবার্তা হয় ফরজ বিধান নামাযেও। এখানে আপনি সরাসরি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন, যেমন ক্ষমা চান শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময়। হেদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহতায়ালা আর রিজিকদাতাও তিনি। তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য বান্দার উত্তম আখলাক ও উত্তম আমলই যথেষ্ট। ‘হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং তাঁর দিকে (এগিয়ে যাওয়ার) উপায় খুঁজতে থাকো (তার দিকে এগুনোর বড় একটি উপায় হচ্ছে) তোমরা তাঁর প্রতি জিহাদ করো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে’-সূরা মায়েদা-৩৫। এই আয়াতে ওয়াসীলা’র অর্থ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে-মানুষ যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। হরযত কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে আল্লাহু সুবাহনু ওয়া তা’আয়ালার আনুগত্য স্বীকার করে এবং তাঁর মর্জি মুতাবেক আমল করে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। সূরা ইসরার ৫৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওরা যাদের ডাকে তারা তো নিজেরাই তাদের মালিকের কাছে (পৌঁছার) উসীলা তালাশ করতে থাকে, (তারা দেখতে চায়) তাদের মধ্যে কে ( আল্লাহতায়ালার) নিকটতর হতে পারে এবং তারা তারই দয়া প্রত্যাশা করে। তারা তাঁর আযাবকে ভয় করে। নিঃসন্দেহে তোমার মালিকের আযাব ভীতিপ্রদ’। তাফসীর ইবন্‌ে কাসির-এ এসেছে, ওয়াসীলাহ হচ্ছে জান্নাতের ঐ উচ্চ ও মনোরম জায়গার নাম যা রাসূল (সাঃ) এর জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং সেটি আরশের অতি নিকটে। জান্নাত আর জাহান্নামের গ্যারান্টি দিতে পারেন একজনই- কোন পীর, কোন মাশায়েক জান্নাতের গ্যারান্টি দিতে পারেন না।
হক্কানি পীর-ওলামা-মাশায়েকগণ ইসলামের মহান শিক্ষক। তাঁদের সংস্পর্শে এসে পবিত্র কোরআন হাদিসের শিক্ষা লাভ করবো আমরা এবং সঠিক দিক-নির্দেশনা পাবার জন্যে চেষ্টা করবো। তাই বলে তাঁদের মাধ্যমে জান্নাত লাভের আশা কুফরীর নামান্তর। সূরা ইউনূসের ১৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছ’। সূরা আয-যুমারের ০৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এজন্যেই করি যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন। আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না’। আমরা শুধু একজনের কাছেই চাইব-তিনি হচ্ছেন আমার আল্লাহতায়ালা। কারণ তিনি আমাকে সৃৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাকে চিনেন। অন্য কারোর মাধ্যমে তাঁর কাছে যাওয়ার যুক্তি নেই।
লেখক : সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি

পূর্ববর্তী নিবন্ধআতঙ্ক নয়, ভালোবাসায় হোক সবকিছুর জয়
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা