হুমায়ূন আহমেদ। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে সমৃদ্ধ এবং তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশকে বইমুখী করার পেছনে যার ভূমিকা তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, বাকের ভাই চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’।
তাঁর লেখা গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে। বাবার রাখা প্রথম নাম শামসুর রহমান হলেও পরে তার বাবা ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাক নাম ছিল কাজল। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্যদিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’।
তাঁর টেলিভিশন ধারাবাহিকগুলোর মধ্যে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘অয়োময়’, ‘আজ রবিবার’, ‘নিমফুল’, ‘তারা তিনজন’ ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘সবুজ সাথী’, ‘উড়ে যায় বকপঙ্খী’, ‘এই মেঘ এই রৌদ্র’। হুমায়ূন আহমেদের চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমনি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। ‘খেলা’, ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কাণ্ড’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভুবন’ এর মত নাটকগুলোর আলোচিত ডায়লগ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক এবং বেশ ক’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভুষিত হন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই লাখ তরুণ–তরুণীদের শোকের সাগেরে ভাসিয়ে নিউইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।