হীরালাল সেন : বাংলা চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষ

| শনিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২২ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলা চলচ্চিত্রের সূচনা, এর চর্চা ও বিকাশে অনন্য পথিকৃৎ হীরালাল সেন। তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের জনক বলা হয়ে থাকে। ১৮৯৮ সালে কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিনেমা জগতে প্রবেশ তাঁর। পরবর্তী সময়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন চিত্র প্রভৃতি তৈরির মধ্য দিয়ে বাঙালি হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। হীরালাল সেনের জন্ম ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জ জেলার বগজুরি গ্রামে। তার পিতার নাম চন্দ্রমোহন সেন, মাতা বিধুমুখী। মানিকগঞ্জ মাইনর স্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। একই সাথে মৌলভী সাহেবের কাছে ফারসী ভাষাও শিখতেন।

১৮৭৯ সালে মাইনর পরীক্ষা পাস করে ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। পরে পিতার সাথে হীরালাল কলকাতা গিয়ে কলেজে ভর্তি হন। আই.এস.সি অধ্যয়নকালে চলচ্চিত্রের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় যবনিকাপাত ঘটে। চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর আগ্রহ তরুণ বয়স থেকে। আর এর আকর্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখেই এই শিল্পমাধ্যমটিতে জড়িয়ে পড়েন। ক্লাসিক থিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য তাঁকে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ে বিদেশ থেকেও তিনি প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম এবং ক্যামেরা আমদানি করেন। ১৯০০ সালে ছোট ভাই মতিলাল সেনকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সে বছর বিলেত থেকে একজন মুভি ক্যামেরাম্যান কলকাতায় এলে তাঁর কাছে রপ্ত করেন মুভি ক্যামেরা চালানোর কলাকৌশল। এরপর শুরু হয় হাতে কলমে কাজ। সেকালের খ্যাতিমান নাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনেতা অমর দত্তের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় জনপ্রিয় বেশ কিছু বাংলা নাটকের বিশেষ বিশেষ দৃশ্য ধারণ করে ১৯০১ সালে কলকাতার ক্লাসিক থিয়েটারে তা চলচ্চিত্রের মতো প্রদর্শন করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের ঐতিহাসিক সভার দৃশ্য ধারণ করেও তা প্রদর্শন করেছিলেন হীরালাল। স্বদেশী যুগে তাঁর এসব ছবি গণমানুষের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি থেকে তাঁর বেশ কিছু নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মিত হয়। এভাবেই বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে নিবেদিতপ্রাণ ও চলচ্চিত্রপ্রেমী হীরালাল সেন অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেন। ১৯১৭ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর মাছ ধরার ছবি নেটিজেনদের মন জয় করেছে
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হোন