হালদার পাড়ে চলছে রেণু ফোটানোর কাজ

চারটি সরকারি হ্যাচারি ও শতাধিক কুয়ায় কার্যক্রম প্রথম দফায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার পোনা বিক্রির আশা

হাটহাজারী ও রাউজান প্রতিনিধি | রবিবার , ১ জুন, ২০২৫ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। ডিম আহরণ চলে গতকাল শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত। হালদা গবেষকদের তথ্যমতে, চলতি অমাবস্যার তিথিতে এবার ২৫০টি নৌকায় ৫৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন।

হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে নদীর দুই পাড়ে এখন চলছে রেণু ফোটানোর কাজ। গত বছর ডিম সংগৃহীত হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৬শ ৮০ কেজি। এবার গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ডিম পাওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা খুশি। নদীর দুই পাড়ে চারটি সরকারি হ্যাচারিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং শতাধিক মাটির কুয়ায় এনালগ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানো শুরু হয়েছে। ডিম থেকে রেণু ফোটাতে রাতদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। গতকাল সারা দিন বৃষ্টি ছিল না। এতে ডিম ফোটাতে ভালো সময় পান আহরণকারীরা। এদিকে গরমের কারণে ডিমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।

প্রতি বছরের এপ্রিল মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে মা মাছের নদীতে ডিম ছাড়ার কথা। এই তিথিতে নদীতে ছাড়া ডিম দ্রুত বাড়ে। কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এ বছর এই মাসের দুই তিথি ও মে মাসের পূর্ণিমার তিথিতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি। এতে ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে কিছুটা হতাশা দেখা দেয়। অবশেষে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মা মাছ ডিম ছাড়ে এবং ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করেন।

হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে কী পরিমাণ রেণু উৎপাদন হতে পারে, উৎপাদিত রেণুর বাজার মূল্য কত হতে পারে সে বিষয় নিয়ে আগামী মঙ্গলবার মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির আনুষ্ঠানিক সভায় মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। সভায় সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংগ্রহ করা ডিমে হবে ৩৫০ কেজি পোনা : হালদা নদী থেকে ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তার হিসাবে অনুসারে, ৪০ কেজি ডিম থেকে এক কেজি পোনা উৎপাদন করা যায়। ১৪ হাজার কেজি ডিম থেকে পোনা উৎপাদন করা গেলে পোনা হবে সাড়ে তিনশ কেজি।

হালদাপাড়ের মৎস্যজীবীরা বলছেন, এবার বেশি ডিম পাওয়া গেছে। আগামী দুদিন সবকিছু ঠিক থাকলে পোনা উৎপাদনও বেশি হবে। তাহলে গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা কমতে পারে। গতবার উৎপাদিত প্রতি কেজি (পানিসহ) পোনা বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবারও এক লাখের উপরে থাকবে। পোনা উৎপাদনকারীদের আশা, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার থেকে প্রথম দফায় বিক্রি শুরু হবে।

রাউজান ও হাটহাজারী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সরকারিবেসরকারি হ্যাচারিগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন। হ্যাচারির সিস্টেনসমূহে ডিম রেখে নাড়াচাড়া করছেন পোনা রূপান্তরের চেষ্টায়। কিছু কিছু ডিম সংগ্রহকারী হ্যাচারিতে জায়গা না পেয়ে উঁচু জায়গায় মাটির কুয়ায় ডিম ফোটাচ্ছেন। কোনো কোনো ডিম সংগ্রহকারীর আগে তৈরি করে রাখা মাটির কুয়া জোয়ারের পানিতে ডুবে যাওয়ায় উচু জায়গায় মাচার উপর মোটা ত্রিপল বসিয়ে সেখানে ডিম ফুটাচ্ছেন।

রাউজানের আজিমেরঘাট এলাকায় দেখা যায়, মৎস্যজীবী রোশাঙ্গীর আলম মাচার উপর ত্রিপল দিয়ে সংগ্রহ করা ডিম থেকে পোনা ফুটাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তিনি জানান, ডিম ফুটানোর প্রস্তুতি হিসাবে আগেই চারটি মাটির কুয়া তৈরি করে রেখেছিলেন। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপে সবকটি মাটির কুয়া ডুবে যাওয়ায় এখন বিকল্প হিসাবে মাচার উপর ত্রিপল দিয়ে পোনা উৎপাদন করার চেষ্টা করছেন।

হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার মৎস্যজীবী কামাল সওদাগর বলেন, তিনি এবার ১০টি নৌকায় ৩৫ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। তার সংগ্রহ করা ডিম নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মিনি হ্যাচারিতে ফুটাচ্ছেন। তার আশা, সবকিছ ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার থেকে হালদার পোনা বিক্রি শুরু হবে।

হাটহাজারী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল বলেন, আমার উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা ডিম সংগ্রহকারীরা ৮ হাজার ৩৪০ বালতি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তারা সরকারিবেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত ১৬টি হ্যাচারি ও ৬০টি মাটির কুয়ায় ডিম ফুটাচ্ছেন। এ পর্যন্ত পোনা উৎপাদনের কাজ ভালোভাবে চলছে। মৎস্যবিভাগের লোকজন পোনা উৎপাদনকারীদের সহযোগিতা দিচ্ছেন।

রাউজান উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, রাউজানের মোবারকখীল হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন কাজে এখন ব্যস্ত ডিম সংগ্রহকারীগণ। তাদের সাথে সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন তিনিসহ তার বিভাগের লোকজন। তার হিসাব অনুসারে, চার বালতি অর্থাৎ ৪০ কেজি ডিম থেকে এক কেজি পোনা উৎপাদন করা যায়। এবার হালদা থেকে আহরণ করা ১৪ হাজার কেজি ডিম থেকে কমপক্ষে ৩৫০ কেজি পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআয়োজনের কমতি নেই, কাজেরও খবর নেই : সালাহউদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬