যাদের ছোট থেকে বড় করা হয়, তারাও বড় হয়ে একসময় আর সম্মান দেখায় না যে এত কষ্ট করে বড় করলো সেই মানুষটাকে। নিজেকে খুব দামী ভাবতে থাকে বড় পোস্টে গিয়ে বা নামী দামী কোন অফিসে কাজ করে। আর বেশি টাকা রোজগার করলে তো কথাই নাই। যিনি নিজের শত কাজ, সময়, টাকা,ও মূল্যবান ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করলো, তার দাম হয় সবার নিচে। আসলে ইদানীং বাবা, মাকেই কেউ মনে রাখে না, সম্মান করে না, সেখানে অন্যরা তো লাঞ্ছিত হবেই। কিন্তু আজকের প্রজন্ম খেয়াল করেনা, আগামীকাল তারাও অবাঞ্চিত হবেন তাদের পরের প্রজন্মের কাছে। কারণ, যে যা কর্ম করে,তা আবার পুনরায় তার ও সেই কর্মের ফল ভোগ করতে হয়। এর ভেতরে আরো কিছু বিষয় আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মূল্যবোধ,সততা, বিশ্বাস,আস্থা, বিবেক, নৈতিকতা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। এই সব হারিয়ে মানুষ আজ বড্ড একা, নিঃস্ব। মানুষ সুস্থ থাকা কালীন পায়না ভালো বন্ধু বা কাছের প্রিয়জনদের, আর বৃদ্ধ বয়সে থাকেনা পাশে পরিবারের কেউ। এছাড়াও মৃত্যুর পর পায়না সঠিক দাফন। মানুষের যত বেশি টাকা থাকে,তার তত বেশি অশান্তি। তাহলে সুখী কারা? সন্তান নষ্ট হওয়ার পেছনে, বাবা মাকে, মা বাবাকে দোষারোপ করতেই থাকে। আসলে দু’জনে ই কি সমান অপরাধী নয়? পরিবার থেকেই তো আমরা প্রথমে সব শিখি। তাহলে কি পরিবারই দোষী? ২০২০ সাল থেকে করোনা নিয়ে গেছে অনেক অনেক নামী দামী, গুণী ও বহু জনপ্রিয় কিছু মানুষকে। তাদের মৃত্যুর পরও দেখা যায়,তাদের সন্তানরা কেউ পাশে ছিলো না। অভিনেত্রী মিনু মমতাজের তিনলাখ চল্লিশ হাজার টাকার বিল হয়েছিলো হাসপাতালে। তাই কোন সন্তান আসেনি কবর দেয়ার জন্য লাশ নিতে, এই টাকা শোধ করতে হবে শুনে। এই সামান্য টাকা তাদের কাছে বড় হলো? আর মা হয়ে তিনি যে লাখ লাখ টাকা রোজগার করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন তার কোন মূল্যই নেই সন্তানদের কাছে? এছাড়াও এল আর বি ব্যান্ডের আইয়ুব বাচ্চু, আনোয়ার হোসেন, মিষ্টি মেয়ে কবরী সবার সন্তানরাই বিদেশে পাড়ি দিয়ে দেশে আর ফিরেনি। এমনকি মা, বাবার মৃত্যুতেও তাদের আসার সুযোগ হয়নি। তাহলে এত টাকা খরচ করে সন্তানদের বড় করে কি লাভ হলো?
করোনা এত ভালো ভালো, দেশ বরেণ্য শিল্পী, কবি,ব্যবসায়ী, শিক্ষক, অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে গিয়ে শূন্য করে দিচ্ছে আমাদের বিভিন্ন মাধ্যমকে। আমরা হারাচ্ছি বিভিন্ন নক্ষত্রমন্ডলীকে। এত মৃত্যু, এত শোক,এত কষ্ট, এত দুর্দশা, এত মর্মান্তিক ঘটনা দেখেও যদি এই নতুন প্রজন্ম কিছুই শিখতে না পারে তাহলে আমরা সামনে হয়তো আরো বড় বিপর্যয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আসুন সবাই আগের মতো ধর্মীয় অনুশাসন মানি,বড়দের সম্মান করতে শিখি,যাদের অবদানের জন্য নিজেকে বড় করতে সক্ষম হয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করি।