হাফিজ : ‘দিওয়ান’ এর বিস্ময়-যাত্রা

হাসনাত চৌধুরী | শুক্রবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

শামসুদ্দিন মুহাম্মাদ হাফিজ সিরাজী। ইংরেজি আনুমানিক ১৩৮৯ সালের দিকে অগস্ত্যযাত্রা করলেও তরুণ বয়সেই বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন কবিতায়। বললে অত্যুক্তি হয় না যে রোম্যান্টিক রূপকের আড়ালে নিগুঢ় ঐশী প্রেমের অন্বেষ্টা হাফিজ তারুণ্যেই বিশ্বের কবিতাপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। আজকের আধুনিক কবিতার কবি, পাঠক, সমালোচকদের চুলচেরা বিশ্লেষণের নবতর মূল্যায়নেও পিছিয়ে নেই যেন। ফন হামার আর গ্যাটের যৌথ প্রয়াস প্রাচ্যবাসি শাখই নাবাতের প্রেমিক, মুসাল্লার হাওয়াখোর হাফিজকে পৌঁছে দিয়েছিল পাশ্চাত্যে। ব্রাউন বলেছিলেনহোমার, কালিদাস, শেক্সপিয়ার, আর গ্যাটেদের কাতারেই আছেন হাফিজ। আত্মনিমগ্ন কোনো বিবরবাসী বিনীত প্রেমিককবির উচ্চারিত শব্দে তীব্র দুঃসাহসী অথচ তিনি নির্বিকার এবং আত্মবিশ্বাসী! তাতে রসসন্ধানী পাঠক চমকে তাকাবেই স্বাভাবিক। তৈমুরের তীক্ষ্ন তরবারিকে তাৎক্ষণিক তামাশায় পরিণত করা তীক্ষ্নকর্মা হাফিজের সেই গল্প সবারই জানা। কিন্তু জানেন কি তাঁর কবিতা আরো কত কী ঘটিয়েছে জগৎজুড়ে?

চলুন জানি তবে

.

কোনো মনোবাঞ্ছার অনিশ্চিত অজানা ভবিতব্যকে জানার জন্য ‘দিওয়ানই হাফিজ’ তথা হাফিজের কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠা উলটে প্রাপ্ত কবিতায় অমোঘ আভাস খোঁজার একটা অদ্ভুত রীতি চলছে প্রায় ছয়শ বছরেরও অধিককাল জুড়ে। কবির সমাধিকুঞ্জে যে রীতি চলমান আছে আজও। ধারণা করা হয়ে থাকে হাফিজের মৃত্যুর দিন থেকেই বিষয়টির প্রচলন শুরু। বলাবাহুল্য যার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যখ্যা নেই কিন্তু রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ব্যক্তি ও তদসংশ্লিষ্ট ঘটনা প্রবাহের সাথে আশ্চর্য সংযোগ। আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিদের অনেকেই এব্যাপারে অস্বীকার করেননি এবং কেউ কেউ থেকেছেন নীরব। এবিষয়ে ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত লেখক মুহাম্মদ দারাবের লেখা বই ‘লতিফায়ে গায়েবিয়া’র বক্তব্য বেশ নির্ভরযোগ্য বলা যায়। গ্রন্থটি হাফিজের কাব্যসমালোচনার আকরগ্রন্থ হলেও এর বিসদ ব্যখ্যায় এটুকু বোঝা যায় যে তাঁর কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠা উল্টে অনিশ্চিত ভবিতব্য সম্পর্কে ইঙ্গিত অথবা ব্যক্তির মনোবাঞ্ছা বিষয়ে অগ্রিম আভাস লাভের এদৈব ধারণা অসত্য নয়। তবে বিজ্ঞানমনস্ক কোনো ব্যক্তি এই রীতিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিলেও কিছু করার নেই।

.

হাফিজ সুফি কবি। সুমধুর কন্ঠের অধিকারী কবি সুর করে কোরআন পাঠ করে হয়ে উঠেছিলেন সকলের আদরণীয়। এই কাজ করেই মিলতো যাঁর খোরাকখরচ তাকেই কিনা মরার পর কাফির ফতোয়া পেতে হয়েছিল! কবিতায় রোম্যান্টিক রূপকের আড়ালে, চয়নকৃত শব্দে ওৎ পেতে থাকে ঐশী প্রেমের আকাঙ্ক্ষা। থাকে অদ্বিতীয় মহাপ্রভুর প্রতি গভীর প্রেম ও সমর্পণ। ‘দিওয়ান’কে বাহ্যত জাগতিক প্রেম বাসনার স্পষ্ট প্রকাশ মনে হলেও মূলত তা ছিলো পরমাত্মার প্রতি কবির প্রেমানুগত্য। রসিক কবির সাহিত্যের মূলভাব অনুধাবন তথা মৌলিক রসাস্বাদনে ব্যর্থ হয় মোল্লা মুন্সি গন। ফলাফল কবির মৃত্যুর পর জানাজাদাফন নিয়ে বাঁধে চরম হাঙ্গামা। উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাফ কথামুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও হাফিজ কাফির হয়ে গেছে তাই তার জানাজা পড়া যাবে না এবং করা যাবে না দাফনও! বিশাল জলরাশির স্রোতের মতো আসা উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সম্মুখে লাশ বহনকারী কবির জনা ছয়েক প্রাণের বন্ধুর শেষমেস অদ্ভুত অসহায় আবদারআপনাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন চোখ বন্ধ করে হাফিজের কাব্যগ্রন্থের পৃষ্ঠা উল্টান, যে কবিতাটি বের হয়ে আসবে তাতে যেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাবে সেই মতেই হবে মৃত কবির সৎকার! আবদার মেনে মোল্লাপ্রধান পৃষ্ঠা উল্টালেন। বের হয়ে এলো দু’লাইনের এ কবিতা

কদম দারীগ মাদার আস জানাজায়ে হাফিজকে বারচেহ গুরকে গুনাহাস্ত মীরওদ বেহেশত!

অর্থাৎ

যদি তোমরা হাফিজের জানাজার জন্য পদক্ষেপ না নাও তবে,

গুনাহতে সে ডোবে যদিও, তবু বেহেশতে সে চলে যাবে!”

.

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মজেছিলেন হাফিজের প্রেমে। নির্জনে অশ্রুপাত করতেন হাফিজের কবিতা পড়ে । তিনি দিওয়ানই হাফিজ উলটে পেয়েছিলেন লাইন কয়টি

তোমার প্রেম কখনো আমার হৃদয় ছেড়ে যাবে না আমার স্মরণ হতে তোমার প্রেমের মাধুরী কেউ কেড়ে নিতে পারবে না

তুমি এমনই ফলক যেখানে আমার দেহমন বিঁধে আছে…”

পিতার মতো রবীন্দ্রনাথও পরেছিলেন হাফিজী ঘোরে। বেশ খানিকটা ফার্সি রপ্তও করেছিলেন শুধুমাত্র হাফিজের দিওয়ানকে বোঝার জন্য। কবিগুরু দিওয়ান ই হাফিজ উলটে পেয়েছিলেন ১৬ ছত্রের এক কবিতা। তার কয়েকটি লাইন উল্লেখ করা হলো

শত্রু যদি চারদিক ঘিরে আমাকে হত্যায় উদ্যত ভয়ই বা কাকে যদি থাকে বন্ধু একটি তোমার মতো। স্বগৌরবে রবি দেখ বিস্ফোরিত আকাশে, হে হাফিজ! বিনয়ে ধুলি হবি যদি সবার কাছে মুখটি ধরে রাখিস।

পৃষ্ঠা উলটে কবিগুরু কর্তৃক প্রাপ্ত কবিতার মর্মার্থ বের করা হল বিশেষজ্ঞ ডেকে। সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করতে থাকেন, কবির মুখ উজ্জ্বল। পরে কবি এব্যাপারে অন্যত্র লিখেছেনবন্ধুরা প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরের সঙ্গতি দেখে খুবই চমৎকৃত হলেন।

.

শিয়া মতবাদি শাসক শাহ ইসমাঈল ক্ষমতায় বসেই গোঁড়া মতবাদীদের সমস্ত সুকৃতি ও সমাধিসৌধ ধ্বংসের আদেশ দেন। আদেশ তালিকায় আসে হাফিজের সমাধীও। এব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয় মোল্লা মগসকে। মগস অর্থ মক্ষী বা মাছি। হাফিজের খ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে মগসকে মনগড়া ভুল তথ্য দেয়া হয় এবং মূর্খ মগস সেই ভুল তথ্যই শাহি দরবারে পরিবেশন করে জানায় যে হাফিজ উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁর সমাধিও বিনষ্ট করা হোক। যদিও সবাই জানে যে হাফিজ ছিলেন উদারপন্থি সুন্নি মতাদর্শী,উদাসীন সুফি। শাহ ইসমাঈলের লোকজন আদেশ মতো হাতুড়ি শাবল নিয়ে ধ্বংস করতে এসে দেখে সমাধি ফলকে লেখা

আধ্যাত্মিক প্রদীপ তুল্য হাফিজ আলো দিয়েছেন

তাঁর গৌরবোজ্জ্বল যশের শিখা থেকে তিনি দীপ্তিমান

মুসাল্লা গাঁ তাঁর বাস। সেখানেই বেদনাবিধুর এক দিনে

মুসাল্লার মাটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ ফসলটিকে গোপন করে ফেললো”

ফলকে উৎকীর্ণ চরণ পড়ে লোকজন গিয়ে শাহ ইসমাঈলকে জানালে তিনি ঘোষণা দিলেন যে তিনি স্বয়ং দিওয়ান ই হাফিজের পৃষ্ঠা খুলে দেখবেন এর অমোঘ বার্তায় কি আসে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক সুলতান ইসমাঈল এক সকালে হাফিজের সমাধিকুঞ্জে এসে পৃষ্ঠা খুলে পেলেন নিম্নের এ দুই ছত্র

সকালবেলা আমার সামনে কালপুরুষ তার কোমরবন্ধনীর প্রদর্শনী খুললেন, যদি বলি আমি হলাম সুলতানের দাস, কসম খেয়ে বলছি!

খানিকটা বিস্মিত ইসমাইল কবির সমাধি ধ্বংসের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। কিন্তু মগস সহ হাফিজের জানাযায় বাধা সৃষ্টিকারীদের বংশধররা তাঁকে বোঝাতে লাগলেন যে হাফিজ ছিলেন শিয়াদের শত্রু। সব শুনে সুলতান মোল্লা মগস সহ তার কট্টরপন্থী অনুচরদের বললেনতোমরা দেখি ভয়ানক উদগ্রীব। হাফিজ কার শত্রু সেটা তো তাঁর কাব্যগ্রন্থই বলে দিতে পারে। তিনি মগসকেই নির্দেশ দিলেন পৃষ্ঠা খুলতে। হুকুম তামিল করতে গিয়ে মগস পেলো

হে মগস (মক্ষী) সীমোরগের উপস্থিতিতে তোর কোনো প্রকারের আত্মপ্রকাশের জায়গা এটা নয়, তুই সবসময় অসম্মানিত এবং আমাদের কেবল বিরক্ত করিস! ”

সমুচিত জবাব পেয়ে মগসের হাল সহজে অনুমেয়। বলাবাহুল্য অক্ষত রইলো কবির সমাধি।

.

এই শাহ রাজবংশের আরেক সুলতান শাহ চাহ সাসপ (১৫২৪১৫৭৬) একদিন তাঁর হাতের বহুমূল্য আংটি নিয়ে খেলছিলেন। হঠাৎ তা হাত থেকে পড়ে গিয়ে কোথাও হারিয়ে গেল। আসবাবপত্র,গালিচা,ঝাড় লন্ঠন সহ সমস্ত ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও তা আর পাওয়া গেল না। উপায়ন্তর না পেয়ে উল্টালেন হাফিজের কাব্যগ্রন্থ। হাফিজী পদ্য বললো

কে লক্ষ্য করে ঐ হৃদয়কে যে অদৃশ্যের আয়নায় রয়েছে

এবং জামশিদের জামবাটি অধিকার করে আছে একটি আংটি!

যেটা মুহুর্তের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে” ইঙ্গিত মতো তালাশ করে সাসপ আংটি খুঁজে পেলেন।

আরেক সুলতান শাহ আব্বাস (১৬৪২১৬৬৭)। তাঁর অতি প্রিয় ভৃত্য সায়াওয়াশ। যাকে অন্য ভৃত্যরা ঈর্ষা করতো সুলতানের প্রিয়পাত্র হওয়ায়। সুলতানকে তার বিরুদ্ধে লাগিয়ে শেষমেস মৃত্যুদন্ডের আদেশ পর্যন্ত আদায় করে ছাড়ে তারা। যদিও সায়াওয়াশ ছিলো সম্পূর্ণ নির্দোষ। প্রিয় ভৃত্যের মৃত্যুদন্ডের মতো নিষ্ঠুর কাজের আগে শাহ আব্বাস খুললেন দিওয়ান ই হাফিজ

তুর্কিস্থানের সুলতান,অভিযুক্ত ব্যক্তির কথায় কর্ণপাত করুন

সে হয়তো কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে তার রক্ত দিয়ে দোষ মুছে দিতে পারে”

শাহ আব্বাস পুনঃতদন্ত করে দেখলেন সায়াওয়াশ নির্দোষ। তিনি তাকে মুক্তি দিলেন।

.

ইমাম কুলি খানের সুদর্শন অহংকারী পুত্র ফতেহ আলি সুলতান। একদিন সে মদমত্ত হয়ে সোনার সূতোয় বোনা কারুকার্য খচিত সবুজ রঙের কেতাদুরস্ত সদরিয়া ঝুলিয়ে মোহন ভঙ্গিতে হাজির হলো হাফিজের সমাধিকুঞ্জে। আরবি রজব মাস, চলছে তখন বাৎসরিক উৎসব। লোকে লোকারণ্য হাফিজিয়া। দাম্ভিক ফতেহ হাফিজি কেতাব উলটে যে কথাটি পেলো

তুমি মদ্যপান করে চমৎকার উজ্জ্বল মত্ত হয়েছ সোনার সূতো খচিত এই অপূর্ব সদরিয়া তোমাকে মানিয়েছে বেশ! এখন নজরানা স্বরূপ হাফিজকে একটি চুমু দাও, হে পশমিনাপুশধারী যুবক!”

তাজ্জব ফতেহ আলি। বললো একটি চুমু দেবো মানে? আমি প্রতিজ্ঞা করলাম চুমু দেবো না। এক সপ্তাহ পর ফতেহ ফের এলো হাফিজের মাকবারায়। পৃষ্ঠা খুলে এবার পেলো

তোমার ওয়াদা ছিল তুমি মদ্যোচ্ছসিত হয়ে এসে আমাকে দুটি চুম্বন দেবে, সেওয়াদার সময়কাল এখানে আসার আগে পার হয়েছে। আমি দুটো চুম্বন পাইনি, এমনকি একটাও না!”

দুটো চুমু? ধুত্তুরি! ফতেহ আলি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তিনটি চুমু দেবো। অর্থাৎ তার মনোবাঞ্ছা মতো উত্তর দিতে পারেননি হাফিজ। তাই সে রাগ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন না করে তাচ্ছিল্য ভরা পদক্ষেপে চলে গেল। ফের এলো সপ্তাহ পরে। এবার উত্তর এলো

সেই তিনটি চুমু দিয়ে এখনও আমাকে অঙ্কিত করে দাওনি তোমার আঙুর সদৃশ ওষ্ঠ দুটো, যদি তাদের দিয়ে আমার পাওনা আদায় না কর তাহলে তুমি আমার কাছে সারাজীবনের জন্য ঋণী হয়ে রইলে।”

হাঁটু গেড়ে বসে কবির সমাধি জড়িয়ে চুম্বনের পর চুম্বন এঁকে গেল ফতেহ।

.

সম্রাট জাহাঙ্গীরের আসল নাম সেলিম। যুবরাজ থাকাকালীন তাঁর উশৃঙ্খলতা চরমে ওঠে। অতিরিক্ত মদ্যপান, বাঈজীআসক্তি আর স্বেচ্ছাচারিতার চরম পর্যায়ে চলে যায় তার কীর্তিকলাপ। আকবরনামায় আবুল ফজল কেবল বাঈজীআসক্তএই অভিযোগ দিয়েই শেষ করেছেন, প্রকৃতপক্ষে যে বাঈজীর জন্য আকবর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তার নাম আনারকলি। এই প্রেমের কারণে পিতা পুত্রের দ্বন্দ্ব চূড়ান্তরূপ নেয়। বিদ্রোহ করেন সেলিম। এলাহাবাদ গিয়ে পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। হত্যা করেন আবুল ফজলকে। আবুল ফজলের মৃত্যুতে ধৈর্যচ্যুতি ঘটে আকবরের। পুত্রকে শাস্তি দিতে ছোটেন এলাহাবাদে। কিছুদিন পর সেলিম জানতে পারেন আকবর ভয়ানক অসুস্থ। এতে সেলিমের বোধোদয় ঘটলো যে এই মুহূর্তে তার রাজধানীতে থাকা উচিত। অথচ তিনি বুঝতে পারছেন না এই অবস্থায় যদি তিনি আগ্রা পৌঁছান তবে তার ব্যপারে আকবরের সিদ্ধান্ত কী হবে; হত্যা না ক্ষমা? কে বলে দেবে এই মুহূর্তে তার ভবিষ্যৎ কি? সেলিম জ্যোতিষে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাই জ্যোতিষ ডেকে গোপন ফাঁসও করতে চাইলেন না। খুললেন দিওয়ান ই হাফিজ। যে কবিতাটি পেলেন তার চরণের রূপ

বিদেশ নির্বাসনে আপন ভূমে ফিরতে করবো যত্ন,

দ্বিধা করে কেন হব চূর্ণ? হারাব না এ রত্ন”

ইঙ্গিত বুঝতে পেরে সেলিম তৎক্ষনাৎ আগ্রা অভিমুখে যাত্রা করেন। পৌঁছে জানতে পারলেন আকবরের জননীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তার কাছে ভুল সংবাদ আসে যে আকবর অসুস্থ। অনুতপ্ত হয়ে পিতার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আকবর কিছুটা শাস্তির বিনিময়ে তা মঞ্জুর করেন। এর কিছুকাল পর জাহাঙ্গীর উপাধি গ্রহণ করে সেলিম হিন্দুস্তানের সম্রাট হন।

কোনো মনোবাঞ্ছার অজানা অদৃষ্ট জানতে উন্মুখ হয়ে আছেন?

কী? উল্টাবেন নাকি হাফিজের কেতাব?

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবেলায়
পরবর্তী নিবন্ধ১১তম দরসুল হাদীস মাহফিল কাল