হাতে হাতে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা

পাখাগ্রাম খ্যাত জিহস ফকিরপাড়ায় শিল্পীদের বিরামহীন ব্যস্ততা

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

চলছে বৈশাখে সারাদেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। এই সময়ে সাধারণ মানুষ একটু শীতল হাওয়া পেতে হাত বাড়ায় হাতপাখার দিকে। হাতপাখার শীতল বাতাস ক্লান্ত শরীরে এনে দেয় স্বস্তি। বর্তমানে দেশের প্রতিটি হাটবাজার, রাস্তাঘাটে পাওয়া যাচ্ছে হাতপাখা। বিশেষ করে চন্দনাইশের ঐতিহ্যবাহী তালপাতার হাতপাখার কদর বেড়েছে এখন কয়েকগুণ।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত লালদীঘির মেলায় হাতপাখার বিশাল একটি বাজার বসে। পাখাশিল্পীদের তৈরি হাতপাখার সিংহভাগ বিক্রি হয় এ মেলায়। লালদীঘির মেলায় চন্দনাইশের পাখাগ্রামে তৈরি কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ লাখ হাতপাখা বিক্রি হয় বলে জানান শিল্পীরা। বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ী ও পাখাশিল্পীরা ইতোমধ্যে মেলায় নিয়ে গেছেন এসব হাতপাখা। প্রতিটি হাতপাখা গড়ে সাড়ে ৩শ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি করেন তারা। সে হিসেবে শুধুমাত্র লালদীঘির মেলায় ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার হাতপাখা বিক্রি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার ওরশ ও আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার বার্ষিক ওরশ উপলক্ষে আয়োজিত মেলা, পহেলা বৈশাখ ও দেশের বিভিন্নস্থানে আয়োজিত বৈশাখী মেলা, বলী খেলা, গরুর লড়াই ইত্যাদিতে হাজার হাজার হাতপাখা বিক্রি হয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও এখানকার তৈরি অল্পবিস্তর হাতপাখা বিদেশে রপ্তানি হয় বলে জানান পাখাশিল্পীরা। সম্প্রতি ঐতিহ্যবাহী পাখাগ্রাম হিসেবে পরিচিত জিহস ফকিরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, হাতপাখা তৈরিতে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন পাখা শিল্পীরা। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাতপাখা তৈরির কাজে সকল বয়সের নারী, পুরুষ, যুবক, যুবতী এমনকি শিশুকিশোররা পর্যন্ত নেমে পড়েছে। গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের সবকটি পরিবারই হাতপাখা তৈরির সঙ্গে জড়িত। জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষ্যে অগ্রিম অর্ডারকৃত হাতপাখা ইতোমধ্যেই সরবরাহ করেছেন পাখাশিল্পীরা। স্থানীয়রা জানান, আধ্যাত্মিক সাধক জিহস ফকিরের নামানুসারে জিহস ফকিরপাড়া হিসেবে নামকরণ করা হলেও চন্দনাইশ পৌরসভার এই পুরো গ্রামটিই বর্তমানে পরিচিতি পেয়েছে পাখাগ্রাম হিসেবে।

জিহস ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র আবদুস শুক্কুর (৫৫) বলেন, বুদ্ধি বয়স থেকেই হাতপাখা তৈরি করছেন তিনি। পিতামাতার কাছ থেকেই শিখেন হাতপাখা তৈরীর কলাকৌশল। তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি হাতপাখা তৈরি ও বিক্রিকে পেশা হিসেবে আগলে রেখেছেন বছরের পর বছর। তিনি আরো জানান, সারাবছরই তালপাতার হাতপাখার চাহিদা থাকে। বিশেষ করে চৈত্রবৈশাখ মাসে যখন তীব্র তাপদাহ শুরু হয়, তখনই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় হাতপাখার চাহিদা। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় দুই হাজার হাতপাখা বিভিন্ন পাইকারদের নিকট সরবরাহ করেছেন। তার অধিকাংশই বিক্রি হবে জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায়। প্রতিজোড়া হাতপাখা পাইকারি হিসেবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। মেলায় তিনি নিজেও বিক্রি করবেন শতাধিক হাতপাখা।

পাখা শিল্পীরা জানান, হাতপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ হলো তালপাতা, বাঁশ, বেত ও রং। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোর বনাঞ্চল থেকে বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করতে হয়। আর হাতপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করতে হয় পার্শ্ববর্তী পটিয়া উপজেলা, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাদ থেকে ফেলে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ চবি ছাত্রলীগ কর্মীর
পরবর্তী নিবন্ধচতুর্থবার শাবক জন্ম দিল আফ্রিকান জেব্রা