বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের বৃহত্তম অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন কয়েক লাখ পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়।
গত দুইদিন ধরে আগাম হোটেল বুকিং না করে কক্সবাজারে আসা হাজার হাজার পর্যটক সৈকতেই রাতযাপন করেছেন। এই সুযোগে কিছু হোটেল ও ফ্ল্যাট মালিক পর্যটকদের কাছ থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫/২০ গুণ বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) শহরের কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেছে। পর্যটকের উপচেপড়া ভিড়কে পুঁজি করে গত দুই দিন ধরেই সীমাতিরিক্ত হারে ভাড়া আদায় করছে কিছু হোটেল ও ফ্ল্যাট মালিক।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা বাদল মিয়া জেলা প্রশাসনে দেয়া অভিযোগে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার সময় সী-পার্ল নামের একটি এপার্টমেন্টের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে উঠেন। তার কাছ থেকে যে কক্ষের ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। অথচ সেই কক্ষ থেকে সকাল ১১টার মধ্যেই তাকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
বাদল মিয়ার মতো অসংখ্য মানুষ গত দুই দিন ধরে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন হোটেল-রেস্তোরাঁ সহ নানা স্থানে। হোটেলের অতিরিক্ত ভাড়া সংস্থান করতে না পারায় আগাম হোটেল বুকিং না করে আসা হাজার হাজার পর্যটক সৈকতেই রাতযাপন করেছেন।
বিজয় দিবসের সরকারি ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হয়ে টানা তিন দিনের বন্ধ পড়ায় গত বুধবার থেকেই কক্সবাজারে শুরু হয় লাখো পর্যটকদের ঢল। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপে প্রায় অচল হয়ে পড়ে শহর। যানবাহনের চাপে শহর ও শহরতলীর ২০ মিনিটের রাস্তা পার হতে ২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৫শ’ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে কিন্তু এবারের টানা তিন দিনের ছুটিতে হোটেলগুলো হাউজফুল। এই সুযোগে কিছু ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী হোটেল বুকিং না করে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে সীমাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা শেষে টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি পেয়ে কয়েক লাখ পর্যটক একসঙ্গে কক্সবাজারে আসায় হোটেল ও রাস্তাঘাটে এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর দুই ঈদ, দুর্গাপূজা ও ইংরেজি নববর্ষে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ পর্যটকের ঢল নামে। তবে করোনার কারণে গত বছর মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস বন্ধ ছিল কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্র। আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটন শিল্প খুলে দেয়ার পর গত নববর্ষে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এসময় একদিনেই কক্সবাজারে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগম ঘটে। করোনার টিকা চালু হওয়ায় এ বছর এ হার আরো তীব্র হতে পারে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে মধ্য ডিসেম্বরে দেখা গেছে।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, আগামী ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর এবং ৩০, ৩১ ডিসেম্বর ও পহেলা জানুয়ারি তারিখেও একইভাবে উপচেপড়া ভিড় হতে পারে। ইতোমধ্যে এই দিনগুলোর জন্য হোটেলে আগাম বুকিং শেষ হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য ভ্রমণপিপাসু হাজার হাজার মানুষ কক্সবাজারে এসেছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটন কেন্দ্র ও সড়ক-মহাসড়কগুলোতে টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, লক্ষ লক্ষ পর্যটকের ভিড়ের মাঝে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যটন সেলের সদস্যরাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সৈকতে দায়িত্ব পালন করছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় আজ শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) শহরের কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, টানা তিন দিনের সরকারি ছুটি শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। তাই কাল রাত থেকেই কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ কিছুটা কমতে পারে।