হত্যা করে লাশ কর্ণফুলীতে!

মুক্তিপণ না পেয়ে নৃশংসতা, গ্রেপ্তার এক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিপণ না পেয়ে পারভেজ আহমেদ (২৬) নামে এক যুবককে খুন করে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়েছে ইলিয়াছ নামের এক অপহরণকারী। গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর চকবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর থানা পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অপহৃতের ভাই ছাদিকুর রহমান। গ্রেপ্তার ইলিয়াছকে গতকাল শনিবার দুপুরে মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে। পারভেজ সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানাধীন রাজাপুর গ্রামের মো. সাইদ মিয়ার ছেলে। এদিকে অপহরণকারীর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত পারভেজের সন্ধানে গতকাল শনিবার দুপুরের পর কর্ণফুলী নদীতে তল্লাশি চালিয়েছে চকবাজার থানা পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন পারভেজের ভাই ছাদিকুর। কর্ণফুলীতে ভাই কিংবা ভাইয়ের লাশের সন্ধান না পেয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদী অফিসে আসেন তিনি।
পেশায় রাজমিস্ত্রি ছাদিকুর শনিবার সন্ধ্যায় আজাদীকে বলেন, আমি ও আমার ভাই পারভেজ রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমি পরিবার নিয়ে থাকলেও পারভেজ চকবাজার ডিসি রোডের আবু কলোনির মেসে থাকে। গত কিছুদিন নিজের অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় ৬ অক্টোবরের পর পারভেজের সঙ্গে কথা হয়নি। হঠাৎ ৮ অক্টোবর আমার ভাইয়ের নম্বর থেকে ফোন করে অপরিচিত একজন এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা পেলে ভাইকে ছেড়ে দেবে বলে জানায়। এরপর ভাইয়ের খোঁজে চকবাজার ডিসি রোডের আবু কলোনির বাসায় যাই। মেসের একজন জানায় দুইদিন ধরে সে বাসায় ফিরছে না। এরপর চকবাজার থানাই যাই।
চকবাজার থানার সেকেন্ড অফিসার আমার ভাইয়ের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে লালদীঘি পাড়ের মহল মার্কেট এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানান। গত ৯-১০ তারিখে মহল মার্কেট এলাকায় এসে ভাইকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কোতোয়ালী থানায় যাই। থানা পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘আপনার ভাই যেহেতু চকবাজার ডিসি রোড থেকে নিখোঁজ, সেহেতু চকবাজার থানাকে বিষয়টি জানাতে হবে।
এরপর চকবাজার থানায় গেলে ১১ অক্টোবর আমার জিডি নেয়া হয়। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ফিরোজ অপহরণকারীর সঙ্গে বিকাশের দোকানদার সেজে বেশ কয়েকবার কথা বলেন। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে চকবাজার এলাকা থেকে ইলিয়াছ নামের ওই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তিনি। পুলিশকে সে (গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারী) জানিয়েছে, ‘কথা কাটাকাটি হওয়ায় তাকে (পারভেজ) মেরে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর শুক্রবার রাতে থানায় একটি মামলা হয়। আজ (শনিবার) আদালতে পাঠিয়ে আসামিকে রিমান্ডে আনবে বলে জানিয়েছেন।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গত ৮ অক্টোবর অপহরণকারীর সঙ্গে ভিকটিমের ভাইয়ের বেশ কয়েক দফা কথোপকথন হয়। এসব কথোপকথনে নগদ অ্যাপসে শুধু টাকা পাঠানোর জন্য বলতে থাকেন অপহরণকারী। অন্যদিকে ভিকটিমের ভাই একবার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার আকুতি প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে অপহরণকারী বলেন, ‘মনে হচ্ছে আপনার কাছে ভাইয়ের মায়া নাই, কালকে বলছেন ৪০ মিনিটি পরে পাঠাবেন, পাঠাননি।’ পরের আরেকটি রেকর্ডে ভিকটিমের ভাই নির্ধারিত নম্বরে টাকা যাচ্ছে না বলে জানালে অপহরণকারীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি ভুল নম্বরে দিয়েছেন, এটি নগদ, আপনি দিয়েছেন বিকাশে, টাকা আসলে আপনার ভাইকে ছেড়ে দেব।’
এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল শনিবার রাত ৮টার পর থেকে অসংখ্যবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই ফিরোজ আলম মুন্সী। পরে চকবাজার থানার ওসি মো. ফেরদৌস জাহান দৈনিক আজাদীকে বলেন, পারভেজ আহমদ নিখোঁজের ঘটনায় একটি জিডির সূত্র ধরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর গ্রেপ্তার হওয়া আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। হত্যা মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, ওসি বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১.১৬ শতাংশ
পরবর্তী নিবন্ধস্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক নিয়ে পুরনো পথেই বিপিসি