হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত টিপ ছোরা উদ্ধার

ছাত্রলীগ নেতা ইভান হত্যা মামলার আরও ৩ আসামি গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৩:২৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা আসকার বিন তারেক ইভান হত্যা মামলার আরও তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইভান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর চেরাগী পাহাড় ও এর আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি টিপ ছোরা উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলো সজীব নাথ (১৯), সৌভিক পাল (২০) ও মো. শাখাওয়াত হোসেন (২০)।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির আজাদীকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিন আসামি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরে গ্রেপ্তার আসামি সজীব নাথের দেখানো মতে নগরীর জামালখানের বাই লেন শরীফ কলোনীস্থ শরীফ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম পাশে নালার ভিতর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার রিমান্ডের শুনানি হবে। ইভান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান ওসি। গত ২২ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে চেরাগী পাহাড় এলাকায় জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাব্বির সাদিকের অনুসারীদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জেরে মারামারির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আসকার বিন তারেক গুরুতর আহত হন। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বিএএফ শাহীন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। কোতোয়ালী থানার এনায়েত বাজার এলাকার এস এম তারেকের ছেলে এবং ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় শোভন দেব, ধ্রুব, প্রান্ত, শ্রাবণ, শচীন, রুবেল দত্ত, অর্ক ও মহান চৌধুরীসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
ঘটনার দিন রাতেই মামলার এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি শোভন দেবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ২৭ এপ্রিল নগরের সিআরবি সাত রাস্তার মাথা থেকে প্রিয়ম বিশ্বাস ও ১০ মে লোহাগাড়া থানাধীন উত্তর আমিরাবাদ মজুমদার পাড়া এলাকা থেকে সৌরভ দাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের অনুসারী ইভানসহ কয়েকজনের সাথে সৈকত গ্রুপের ধ্রুবসহ কয়েকজনের ‘ঝামেলা’ হয়। হোটেলে সিটে বসা নিয়ে মারামারি বাধে ইভান ও ধ্রুবর মধ্যে। এ সময় ইভান ধ্রুবকে মারধর করে এবং তার গায়ে চেয়ার ছুঁড়ে মারে। ঘটনার দিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল জামালখান সেন্টমার্টিন স্কুলের সামনে সাব্বির গ্রুপের অমিতকে পেয়ে মারধর করে সৈকত গ্রুপের ধ্রুব, প্রান্ত, শোভনসহ অন্যান্যরা। এর মধ্যে অমিতের ফোন পেয়ে ছুটে আসে ইভানসহ তার বন্ধুরা। জানতে পারে সৈকতের গ্রুপটি তখন অবস্থান করছে আন্দরকিল্লায়। এরা আন্দরকিল্লা যায়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে এক পর্যায়ে তারা চেরাগীর দিকে চলে আসে। আজাদী অফিসের পেছনে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। উভয় গ্রুপই ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে ঘটনায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন রাজাপুর লেইনে দয়াময়ী ভবনের সামনে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ইভানতে পাঁজাকোলা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে ইভানকে চেরাগির মোড়ের আজাদী গলি সংলগ্ন রাজাপুকুর লেইনের ভেতরে কয়েক দফা ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাকে চেরাগী পাহাড়ের মুখে এনে পুনরায় পেটানো হয়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সাব্বির সাদিক নিজেকে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা দাবি করে এলাকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। তার অনুসারী কিছু কিশোর-তরুণ রয়েছে যারা বিভিন্ন এলাকায় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে সৈকতের গ্রুপটি কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারী। তবে উভয় গ্রুপই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিনের রাজনীতি করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবান সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টারশেলে রোহিঙ্গা যুবক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধআগামীতে কর্ণফুলী উপজেলা সুন্দর শহরে পরিণত হবে : ভূমিমন্ত্রী