সড়ক-মহাসড়কে বেঘোরে মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়

| রবিবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

পত্রপত্রিকায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয় ‘দেশে একদিনে সড়কে ঝরল ২০ প্রাণ’ শীর্ষক সংবাদ। ২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে রোডটি সেফটি ফাউন্ডেশনের ‘সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২০’ এ বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত পাঁচ হাজার ৪৩১ জনের মধ্যে ৮৭১ জন নারী ও ৬৪৯ জন শিশু। গত বছর এক হাজার ৩৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৬৩ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫১২ জন পথচারী নিহত হয়েছে। যা মোট নিহতের ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৮৩ জন। অর্থাৎ মোট নিহতের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। জেলা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ময়মনসিংহে এবং সবচেয়ে কম মেহেরপুরে।
গুরুতর এই জাতীয় সমস্যাটি সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না বলে অনেকের অভিযোগ; যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে সড়ক-মহাসড়কে মানুষের মৃত্যু প্রতিনিয়তই ঘটবে, কারোর কিছু করার নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়ে অবশ্যই অনেক কিছু করার আছে। বাংলাদেশ সে অঙ্গীকারও করেছে: জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যারা অঙ্গীকার করেছিল যে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে কাজ করবে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। কিন্তু আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, সেই অঙ্গীকার পূরণের জন্য আমরা কতখানি অগ্রসর হতে পেরেছি? লক্ষ্যণীয়, অঙ্গীকার পূরণ দূরে থাক, বরং যতই দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এটা শুধু ফাঁপা অঙ্গীকার ছিল। দুর্ঘটনা রোধে বা কমিয়ে আনতে সত্যিকার অর্থে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো আদৌ কোনো কার্যকর পরিকল্পনা ও কৌশলই গ্রহণ করেনি। এটা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্বহীনতার আরেকটি বড় প্রমাণ। আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব-সেসব বহুল আলোচিত বিষয়। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটা দাগে কিছু কারণ বিদ্যমান। এগুলো হলো-চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা, ফিটনেসবিহীন ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ইত্যাদি।
আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুঘটনা ঘটে, কী কী পদক্ষেপ নিতে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব-এসবও বহুল আলোচিত বিষয়। অনেক গবেষণা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আছে। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশে ৫৩ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা। মহাসড়ককগুলোয় বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দেশের সড়ক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো সংশোধন করতে হবে। এছাড়া রাস্তার পাশে হাটবাজার স্থাপন ও ওভারব্রীজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সঠিক প্রকৌশলগত জ্ঞানের ভিত্তিতে এসব ত্রুটি দূর করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রথম কাজ। ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল-এসব বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালককেই যেন লাইসেন্স দেওয়া হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে এটা একটা গুরুতর জাতীয় সমস্যা। সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট হতে হবে, যাত্রী সাধারণের সচেতনতাও বাড়াতে হবে।
সড়ক-মহাসড়কে বেঘোরে মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের কাছে সারাজীবনের জন্য গভীর ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে জারি রয়েছে, বেরও হয়েছে অনেক কিছু। তবু বছর বছর দুর্ঘটনা নতুনরূপে হাজির হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের দ্রুত সক্রিয়তা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে