নগরীতে জামায়াতে ইসলামী একের পর এক অতর্কিত মিছিল–সমাবেশ করছে। চলতি মাসে অনেকটা ‘চোর–পুলিশ খেলা’র মতো এ ধরনের ঘটনা একাধিকবার সংঘটিত করেছে তারা। গতকাল শনিবার সকালেও নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে মিছিল করে নেতাকর্মীরা মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করে; তখন পুলিশের বাধার মুখে সেখানে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ সেখান থেকে দলটির ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে
সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান। গ্রেপ্তাররা হলেন মো. মাসুদ পারভেজ (৩৫), শেখ তাজুল ইসলাম (৩৫), ইমরান হোসেন (২২), বেলাল হোসেন (৪১), মো. তৌহিদুজ্জামান (৩৮), মো. আরিফুল ইসলাম (৩৯), মো. ইসমাইল দাউদ (৩৩), মো. সোহেল (২৬) ও নুর মোহাম্মদ (৩০)।
উপ কমিশনার মোখলেছুর রহমান বলেন, জামায়াতের এ গণমিছিলের বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানত না পুলিশ। সড়ক বন্ধ করে মিছিল–সমাবেশের খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিমকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। এ সময় সড়ক থেকে জামায়াত–শিবিরের নেতাকর্মীদের পুলিশ সরে যেতে বললে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আমাদের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে হঠাৎ করে মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের হাজার খানেক নেতাকর্মী। মিছিলের সামনে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল– কেয়ারটেকার সরকারসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে গণমিছিল। এতে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলের মাঝের দিকে ও পেছনের সারিতে থাকা নেতাকর্মীদের বেশির ভাগের মুখে ছিল মাস্ক। শিবিরের কর্মীদের হাতে লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকাও দেখা যায়। মিছিলটি সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখে এসে অবস্থান নেয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ফ্লাইওভারের মুখের সড়ক বন্ধ করে সমাবেশের সময় এক পাশের অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় ৪০ মিনিটের এ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমিরে জামায়াত অত্যন্ত মানবিক একজন নেতা হওয়ার পরেও তাকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা স্বৈরাচারের কবল থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব। কর্মসূচিতে অংশ নেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, প্রচার সম্পাদক এএইচএম কামাল, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান ও ছাত্রনেতা নোমানুর রশিদ।
পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, মিছিলটিতে নেতৃত্ব দেন নগর জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। এতে সিনিয়র নায়েবে আমির নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিনসহ নগর জামায়াতের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে যাচাই–বাছাই শেষে ৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আটজনসহ মিছিলে অংশ নেওয়া জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে নগর জামায়াতের আমিরসহ ১৮ জনের নামে মামলা হয়েছে। গতকাল রাতে পাঁচলাইশ থানায় হওয়া এই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২৫০ জনকে। এসআই কামরুজ্জামান খানের করা এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহন চলাচলে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে নগর জামায়াতের আমির মাওলানা মো. শাহজাহানকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা সড়কে সমবেত হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি ভাংচুর, যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়া ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার চেষ্টা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আসামিরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
