সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় এনে পদক্ষেপ নিন

| সোমবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালিত হয় প্রতি বছর। এবারও পালিত হলো গত ২২ অক্টোবর। সড়কে নিরাপত্তা প্রদান তথা সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’। সড়ক আইন মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতি বছরই এ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করার জণদাবি উচ্চারিত হয় জোরেশোরে। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয়, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাচ্ছে না। বরং সড়ক দুর্ঘটনা মানবঘাতক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো হলো: বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তা-ঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং ছোট যানবাহন বৃদ্ধি।

এ ছাড়া সড়কের পাশে স্থানীয় জনগণ কর্তৃক হাট-বাজার বসানো বা স্কুল/মসজিদ তৈরি করাসহ আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় না থাকার কারণে সুন্দরভাবে নির্মিত হওয়ার পরও প্রায় সময়ই সড়ক কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হয় বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, তাতে বেড়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা। ফলে জানমালের ক্ষতির পাশাপাশি সড়কেরও ক্ষতি হয়। দুর্ঘটনার বিবিধ কারণ থাকলেও যখন দেখা যায় একই স্থানে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে, তখন বুঝে নিতে হয় ওই স্থানে সড়কের ডিজাইনগত ত্রুটি রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করা হয় কিছু টুলস। যেমন-গতি সীমিত করার জন্য সাইন বা ওভারটেকিং নিষেধসংক্রান্ত সাইন/মার্কিং। অনেক সময় সড়কের প্রশস্ততা কিছুটা বাড়িয়ে ডিভাইডার দেওয়া হয়। এতে ওই স্থানে দুর্ঘটনা কমে গেলেও অন্য কোনো স্থানে একইভাবে ডিজাইনগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। তখন আবার ওই স্থানেও কিছু সেফটি মেজার নিতে হয়।

দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি এক লেখায় বলেছিলেন, সড়কের নির্মাণ শেষে যানবাহন চলাচল শুরুর আগেও যদি সেফটি অডিট করা যায়, তাহলেও দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। দুর্ঘটনার পর স্থানভিত্তিক চিকিৎসা না করে অর্থাৎ শুধু ওই নির্দিষ্ট স্থানে সেফটি মেজার না দিয়ে নিদেনপক্ষে যদি বিদ্যমান সড়কের ক্ষেত্রেও সেফটি অডিট করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তাই নতুন সড়কের ক্ষেত্রে ডিজাইন স্টেজে এবং অন্যান্য বিদ্যমান সড়কের ক্ষেত্রে সেফটি অডিট সম্পন্ন করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ছাড়া নতুন কোনো সড়কের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সেফটি অডিট সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতার বিষয়েও দৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ মালা পেশ করেছিল। এর মধ্যে রয়েছে : ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা, টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা, দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং অংকন করা, গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রী,পথচারী ও গণপরিবহনবান্ধব সড়ক পরিবহন বিধিমালা জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা, সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা। এসব সুপারিশ বিবেচনায় এনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বিবেচনায় আনতে হবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে