সড়কে ভূমিষ্ঠ সেই নবজাতক ‘শঙ্কামুক্ত নয়’

পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ ট্রাকটি ছিল লাইসেন্সবিহীন চালকের হাতে

| বুধবার , ২০ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাক চাপায় মায়ের মৃত্যুর মধ্যে জন্ম নেওয়া সেই শিশুর স্বাস্থ্যের জটিলতা দেখা দিয়েছে। গত রোববার রাতে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

শিশুটি জন্ডিসের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ও রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. তফাজ্জল হোসেন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. তফাজ্জল হোসেন খান বলেন, নবজাতকটি জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি রক্ত স্বল্পতা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। মঙ্গলবার দুপুরে তার শরীরে রক্ত দেওয়া হয়েছে। এখন অক্সিজেন চলছে। তিনি আরও বলেন, শিশুটির হাত ভাঙার পাশাপাশি মনে হচ্ছে ঘাড় ও পিটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট এবং রক্ত স্বল্পতা সেরে গেলে আলট্রাসনোগ্রাম করা হবে। তবে শিশুটি শঙ্কামুক্ত নয়। যেকোনো সময় অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি শিশুটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য।

পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ : সড়কে জন্ম নেওয়া সেই শিশুর জন্য প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেইসঙ্গে শিশুটিকে দেখভালের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে একটি কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ওই কমিটিকে শিশুটির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন। পরে তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর অধীনে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি নিষ্পত্তির জন্য গঠিত ট্রাস্ট্রি বোর্ডকে আদালত বলেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ওই শিশুর পরিবারকে দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর ভরণপোষণ ও তার পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে না- সেই প্রশ্নে রুল জারি করেছে আদালত। আলোচিত এই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে সোমবার জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।

ট্রাকটি ছিল ‘লাইসেন্সবিহীন’ চালকের হাতে : এ ঘটনায় গ্রেপ্তার চালক রাজু আহমেদ শিপনের ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না; আর ট্রাকটির ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস সার্টিফিকেটও ছিল না বলে র‌্যাবের ভাষ্য। গতকাল কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তারের পর শিপন র‌্যাবকে বলেছে, দুর্ঘটনার সময় তার সহকারী ঘুমাচ্ছিলেন। টানা ট্রাক চালানোর কারণে তিনিও ছিলেন ক্লান্ত। আর পেছন থেকে একটি বাসকে সাইড দিতে গিয়ে বামে চাপাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। কমান্ডার মঈন জানান, গত ১০-১২ বছর ধরে সে চালকের কোনো কাগজপত্র ছাড়াই নিয়মিত ট্রাক চালিয়ে আসছিল।

গত শনিবার দুপুরে ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় উপজেলার রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৪০), তার স্ত্রী রত্না বেগম (৩০) এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন (৬) মারা যায়। মৃত্যুর আগে রত্না বেগম সড়কেই এক নবজাতকের জন্ম দেন। শিশুটিকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে শোরগোল চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে অবৈধ ফটোগ্রাফার আটক
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে ৯ ট্রান্সফরমার চুরি ঝুঁকিতে চাষাবাদ