স্লুইচ গেট স্থাপনে আরো অগ্রগতি

মেগা প্রকল্প ।। নেদারল্যান্ড থেকে এলো টাইডাল রেগুলেটর ইংল্যান্ড থেকে আসছে পাম্পও

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর পাঁচটি খালের মুখে স্থাপনের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা টাইডাল রেগুলেটরের গেট (স্লুইচ গেইট) চট্টগ্রাম পৌঁছেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস শেষে স্থাপনের লক্ষ্যে গেটগুলো চলতি সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট খালে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া খালগুলোতে স্থাপনের লক্ষ্যে গত ৩০ জানুয়ারি ইংল্যান্ডে শিপমেন্ট করা হয়েছে ১১টি পাম্প। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পাম্পগুলো চট্টগ্রাম পৌঁছার কথা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাম্পসহ রেগুলেটর স্থাপন শেষ হলে জোয়ার এবং বৃষ্টির পানি থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে নগরবাসী। কারণ রেগুলেটরের গেট বন্ধ রেখে জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ আটকানো যাবে। আবার পাম্প দিয়ে সেচ করা হবে বৃষ্টির পানি।
মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতাভুক্ত খাল ৩৬টি হলেও পাম্পসহ রেগুলেটর স্থাপন হবে পাঁচটি খালে। খালগুলো হচ্ছে মহেশখাল, টেকপাড়া খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল এবং মরিয়ম বিবি খাল।
টাইডাল রেগুলেটরের আমদানিকৃত গেইটগুলো হচ্ছে এফআরপি (ফাইবার রিইনফোর্ডেড প্লাস্টিক) ধরনের। এগুলো মরিচারোধক। অতীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক স্থাপিত স্লুইচ গেইটে ব্যবহার করত এমএস শিট। যেগুলোতে মরিচা বা জং ধরে। আমদানিকৃত প্রতিটি গেইটের দৈর্ঘ্য এক দশমিক আট মিটার এবং প্রস্থ এক দশমিক পাঁচ মিটার। প্রতিটি গেইটের দাম দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, মহেশখালের যে অংশে টাইডাল রেগুলেটর স্থাপন করা হবে সেখানে খালের প্রস্থ ৫০ দশমিক ০২৫ মিটার। স্থাপন করা রেগুলেটরটি হবে ১২ ভেন্টের (১২টি গেইট)। এছাড়া ২০ ফুট প্রশস্ত একটি নেভিগেশন লক (নৌযান চলাচলের পথ) থাকবে মহেশখালে। স্থাপন করা হবে তিনটি পাম্প। প্রতিটি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫ হাজার ৫০০ লিটার পানি সেচ করা যাবে। আমদানি থেকে স্থাপন পর্যন্ত প্রতিটি পাম্পের জন্য খরচ হবে ছয় কোটি টাকা।
জানা গেছে, মহেশখালের রেগুলেটরটি আধুনিক এবং অটোমেটিক সিস্টেমে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ পানি নিচে নেমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইট খুলে যাবে। জোয়ারের পানির চাপ বেশি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার তা বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও পাম্পগুলো চলবে জেনারেটর দিয়ে। জেনারেটরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে।
এছাড়া বাকি চারটি খালে (টেকপাড়া পাড়া খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল এবং মরিয়ম বিবি খাল) স্থাপন করা প্রতিটি রেগুলেটর হবে চার ভেন্টের (চারটি গেইট থাকবে)। এসব খালের প্রতিটিতে পাম্প বসানো হবে দুইটি করে। প্রতিটি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার লিটার পানি সেচ করা যাবে। এসব পাম্পের প্রতিটির জন্য খরচ হচ্ছে (আমদানি থেকে স্থাপন পর্যন্ত) এক কোটি ১০ লাখ টাকা।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, গেইট নেদারল্যান্ডের এবং পাম্প ইংল্যান্ডের। রেগুলেটরের গেইট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে দুই সপ্তাহ হচ্ছে। শুল্ক জটিলতায় সেগুলো আমরা বুঝে নিতে পারিনি। এখন সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এ সপ্তাহে গেইটগুলো বুঝে পাব। এরপর সাইটে নিয়ে এসে লাগানোর কাজ শুরু করে দেব।
কবে থেকে রেগুলেটরগুলো অপারেট করা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, ফিরিঙ্গি বাজার ও টেকপাড়া খালের রেগুলেটর দ্রুত ফাংশনাল করতে পারব। মহেশখালের রেগুলেটর এগুলোর পরে হবে। মহেশখালের জন্য যেসব উপকরণ দরকার তার তিন ভাগের এক ভাগ চলে এসেছে। চারটি খালের যেগুলো আসছে সেগুলো লাগাতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা না হয় তখন সাথে সাথে নেদারল্যান্ডে পরবর্তী শিপমেন্ট করতে বলব। কোনো ত্রুটি পেলে সেটাও জানিয়ে দেব, যাবে পরবর্তী শিপমেন্টে সেটা পূরণ করা যায়। তখন এক-দেড় মাসের মধ্যে পেযে যাব। রেগুলেটরগুলো কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লাগাবে না, আমরা লাগাব। সেক্ষেত্রে কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয় কিনা সেটা দেখার জন্য সবগুলো একসাথে নিয়ে আসিনি।
মহেশখালে রেগুলেটর এবং পাম্প স্থাপন কাজ শেষ হলে আগ্রাবাদ, হালিশহর, মা ও শিশু হাসপাতালসহ আশেপাশে যেখানে জোয়ারের পানি ঢুকে তা বন্ধ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি বেড়ে গেলে পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করা যাবে। আগামী বর্ষায় এসব সুফল মিলবে। শহরে পানি বেশি হয়ে গেলে পানি নিষ্কাশনের জন্য নেভিগেশন লকও খুলে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ঘরে বসেও প্রযুক্তির সাহায্যে মহেশখালের রেগুলেটরটি অপারেট করা যাবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ছিল ৫৫ শতাংশ। বৃষ্টির জন্য প্রায় তিন মাস স্থগিত রাখার পর গত বছরের অক্টোবর থেকে আবারো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে আরো ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে প্রকল্পটির মোট ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হবে আগামী বর্ষার আগে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ ডাকাত গ্রেপ্তার