স্মার্ট হচ্ছে চসিকের তিন ওয়ার্ড

থাকবে না ওভারহেড ক্যাবল, লাগানো যাবে না পোস্টার ।। ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হবে অবৈধ দখলদার ।। সব ধরনের সেবার বিল দিতে থাকবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস বুথ

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

পৃথক তিনটি ওয়ার্ডকে ‘স্মার্ট ওয়ার্ড’ এ রূপান্তর করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১৪ নং লালখান বাজার, ১৫ নং বাগমনিরাম এবং ২১ নং জামালখান। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ চসিকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে চসিক। এর মধ্যে উন্মুক্ত ডাস্টবিন অপসারণ ও উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণে ঘরে ঘরে তিন ধরনের বিন সরবরাহসহ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নেটওয়ার্কিং সিস্টেম গড়ে তুলতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি।

এছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে থাকবে না ওভারহেড ক্যাবল বা ঝুলন্ত তার। লাগানো যাবে না পোস্টার। ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পাশাপাশি পুর্নদখল রোধে প্রতিদিন মনিটরিং করতে বিশেষ টিম নিয়োগ করা হবে। ওয়ার্ডগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণেও নেয়া হবে বিশেষ উদ্যোগ। তিন ওয়ার্ডের প্রতিটির সম্পূর্ণ এলাকাকে সিসিটিভি’র মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হবে। গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের জন্য বিশেষ বুথও স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকারের উদ্যোগের আওতায় চট্টগ্রামকে প্রথম স্মার্ট জেলা করতে কাজ করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে চসিকের সঙ্গে গত কয়েক মাসে একাধিক বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। যেখানে লালখান বাজার, জামালখান ও বগমনিরামকে স্মার্ট ওয়ার্ডে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। স্মার্ট ওয়ার্ড নিয়ে লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর একটি প্রোফাইলও তৈরি করে। যার সঙ্গে বাকি দুই ওয়ার্ড সমন্বয় করে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।

চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্র্র্র্তারা জানিয়েছেন, কয়েকটি উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্ট ওয়ার্ড এর বিষয়টি ঘোষণা দেয়া হবে। এর আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ওভারহেড ক্যাবল বা ঝুলন্তভাবে থাকা ব্রডব্যন্ড ইন্টারনেট, কেবল টিভি নেটওয়ার্কের তার (ডিশ সংযোগ) ও জেনারেটর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তার নিয়ন্ত্রণ এবং ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্তসহ কয়েকটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে। লালখান বাজার ওয়ার্ডে ওভারহেড ক্যাবল নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অগ্রগতি দৃশ্যমান। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য ওয়ার্ডগুলোর প্রতিটি হোল্ডিংয়ে তিনটি করে বিন সরবরাহ করা হবে। এর একটিতে কঠিন বর্জ্য, একটিতে প্লাস্টিক বর্জ্য এবং একটিতে গৃহস্থলী বর্জ্য ফেলবেন ঘরের বাসিন্দারা। যা কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা এবং নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং, স্মার্ট ইলেক্ট্রিক কেবল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চটগ্রামকে একটি স্মার্ট নগরে পরিণত করার পরিকল্পনা আছে।

সিটি মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, ডিসি অফিসে একটি মিটিং হয়, সেখানে আমাদের তিনটি ওয়ার্ডকে স্মার্ট করার সিদ্ধান্ত নিই। সে আলোকে লালখান বাজার ওয়ার্ডে ওভারহেড ক্যাবল অপসারণের বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। জামালখানে ফুটপাতে বিন দেয়া হয়েছে। উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণে ঘরে ঘরে তিনটি করে বিন দেয়ার পরিকল্পনার মধ্যে আছে। সেজন্য স্পন্সর খুঁঝছি। উন্মুক্ত ডাস্টবিন সরিয়ে নিয়ে বিকল্প জায়গা খুঁজছি। যেমন পুরাতন বিমান অফিফ, আলমাস সিনেমা মোড়, জিইসি কভেনশনের পেছনে যে ডাস্টবিন পয়েন্ট আছে সেগুলো সরিয়ে নিব। স্মার্ট সিটির মধ্যে নালা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে বলেন, ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সিস্টেম করব। নালাগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করব। সবধরনের সেবার বিল দেয়ার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর বুথ করার পরিকল্পনা আছে। তবে সে জন্য জায়গা পাওয়া এবং সেবা সংস্থার সমন্বয়েরও ব্যাপার আছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রায় প্রতিদিন তিন ওয়ার্ডে অভিযান চালাচ্ছি। মূলত মানুষকে এর মাধ্যমে অভ্যস্ত করা হচ্ছে। হকার বসতে না দেয়ার জন্য তিনটি ওয়ার্ডে তিনটি টিম থাকবে।

স্মার্ট ওয়ার্ডের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল আজাদীকে বলেন, ওয়ার্ডে যেসব ঝুলন্ত তার রয়েছে সেগুলো অপসারণ করে সার্ভিস প্রোভাইডাররা যাতে সুন্দরভাবে তাদের সেবা দিতে পারে তার জন্য সুন্দর একটা নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তুলছি। নাগরিক সুযোগসুবিধা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতে একটা অ্যাপস ডেভেলাপ করছি, যেখানে এলাকায় বসবাসকারীদের তথ্য সংগৃহীত থাকবে। এলাকার পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠির তথ্যও থাকবে সেখানে। লোকাল থানার সাথেও আমরা সমন্বয় করব। পুরো এলাকাকে সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতায় আনব। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলব এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের ড্রেনগুলোতে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি।

কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল বলেন, ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণের জন্য যা করা দরকার তার ৮০ শতাংশ শেষ করেছি। আশা করছি নভেম্বরের শেষ নাগাদ পুরো নেটওয়ার্ক রেডি হয়ে যাবে। এক্ষত্রে উপরে কোনো কেবল থাকবে না। বিকল্প ব্যবস্থা করে এ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা করছি। তখন সার্ভিস প্রোভাইডারদের তার সরিয়ে ফেলতে বলব। ওভারহেড ক্যাবল এর সমাধান হওয়া মাত্রই উন্মুক্ত বা অস্বাস্থ্যকর ডাস্টবিন সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করব। আউটসোর্সিংয়ের আওতায় প্রত্যেকটা বাসার পার্কিং এর জায়গায় গার্ভেজ এর বিন বসাব। সেখান থেকে প্রতিদিনের ময়লা আমরা সংগ্রহ করে ডাম্পিং এরিয়ায় নিয়ে যাব। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা রোধ এবং পোস্টার লাগানো বন্ধে সিসিটিভি’র ব্যবস্থা করব এবং কেউ ময়লা ফেললে জরিমানা আদায় করা হবে। সমস্ত কার্যক্রম ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে বলেন, ইতোমেধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে নান্দনিক ওয়ার্ডে পরিণত করেছি। স্মার্ট ওয়ার্ড নিয়ে ডিসি অফিসে কয়েকটি মিটিংও হয়েছে। সেখানে বলেছি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করব। প্রথমে দুটো পদক্ষেপ বস্তবায়নের পক্ষে। এর মধ্যে একটি যানজট নিরসন এবং দ্বিতীয় ঝুলন্ত তার নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, জামালখানে খাস্তগীর স্কুল, সেন্ট মেরিস, চিটাগাং আইডিয়াল ও মহসিন স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। স্কুলগুলোতে প্রায় ১০ হাজার স্টুডেন্ট আছে। তাদের সঙ্গে আসে ১০ হাজার অভিভাবক। তাদের বহনকারী গাড়ি, লোকাল গাড়ি এবং পথচারীসহ মিলে পুরো এলাকায় দুই ঘণ্টার জন্য যানজট লেগে থাকে। পুরো এলাকা ব্লক হয়ে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তণের জন্য আমাদের পরিকল্পনা স্কুলগুলোর শুরু এবং ছুটির সময়ে আলাদা করা। ৩০ মিনিট করে গ্যাপ রাখলে এ সমস্যা নিরসন হবে। তিনি বলেন, পানি উঠাসহ নানা কারণে এ মুহূর্তে মাটির নিচ দিয়ে ক্যাবল নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব খুঁটি দিয়ে পাইপের মাধ্যমে তারগুলো নিয়ে যাওয়া যায়। তখন কিন্তু আর তারগুলো দেখা যাবে না। এছাড়া যেখানেসেখানে পোস্টার লাগানো বন্ধের বিষয়টিও আছে। তারের জঞ্জালমুক্ত, পোস্টারমুক্ত এবং যানজট মুক্ত জামালখান করে বাকি পদক্ষেপ নিব।

বগিমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন আজাদীকে বলেন, স্মার্ট ওয়ার্ড করতে আমরা একটা প্রোফাইল করেছি। সেটা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা আছে এবং সে আলোকে আমরা কাজ করছি। পাখির বাসার মত যে ক্যাবলগুলো আছে সেগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে নারীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ
পরবর্তী নিবন্ধ১৫০ কিমি হাঁটবেন ৮ রোভার