স্মরণের আবরণে আমার প্রিয় বাবা

সুব্রত কুমার নাথ | সোমবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

সূর্য পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস। তেমনি প্রতিটি পরিবারে বাবা হলেন সন্তানের সাহস ও শক্তির উৎস। বাবা ছাড়া সন্তানের জীবন অন্ধকার হয়ে যায়। বাবা হলেন একটি সংসারের বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষের ছায়ায় পথিকেরা যেমন ক্লান্তি দূর করে, শীতলতা অনুভব করে, ঠিক তেমনি বাবার স্নেহ- ভালোবাসায় সন্তানের জীবনের সব দুর্দশা ও ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। বাবার ভালোবাসা ও নির্দেশনায় সন্তানরা সারাজীবন আলোর পথ খুঁজে পায়। বাবাহীন জীবন বালুকাময়। সেখানে স্বস্তি নেই, শীতলতা নেই। যেদিকে চোখ যায়, দেখা যাবে শুধু হাহাকার আর ধূসর প্রান্তর। আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়ে আমার জীবনও আজ বালুকাময়। নিষ্প্রভ ও বেদনাময়। গত ১৯ অক্টোবর, ২০১৩ খ্রি. মধ্যরাতে আমার বাবা তাঁর প্রিয় পরিবার, আত্মীয়- স্বজন ও এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অমৃতলোকে চলে যান। তাঁর প্রয়াণে পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। নিস্তেজ ও নিরুৎসব হয়ে পড়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ব্যবস্থা। এরপরও আমরা চার সন্তান বাবার মহান আদর্শ ও লালিত স্বপ্নকে ধারণ করে আলোতে চলার পথ খুঁজে পেয়েছি। পথের বাঁকে বাঁকে বাবাকে আমার খুব মনে পড়ে। আমার বাবা তাঁর নিজের ইচ্ছে ও স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে আশা জাগাত। কতবার বাবার পকেট খালি দেখেছি, অথচ হাসিমুখে সবার সব চাহিদা পূরণ করতো, এই হলো আমার প্রিয় বাবা স্বর্গীয় হরি সাধন নাথ। বাবা উচ্চশিক্ষিত না হয়েও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার দপ্তরে চাকরি করার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সাহচর্যে আমাদেরকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতো। শুধু তাই নয়, তিনি খুব সংগীতপ্রিয় মানুষও ছিলেন। যেখানে কীর্তন গানের আসর বসতো, সেখানে তাঁর সপ্রাণ উপস্থিতি থাকতো। সবাই আমাদেরকে সংগীত পরিবার হিসেবে জানে। এটা আমার বাবার কৃতিত্ব। তিনি সব সময় কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। বেয়াই- বেয়াইন সম্মেলন, আত্মীয়দের নিয়ে চড়ুইভাতি আয়োজন, সব বয়সিদের সাথে আড্ডা দেওয়া ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এছাড়াও এলাকার নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সরব পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি ছিলেন একজন প্রাণখোলা মানুষ, মানুষকে অনর্গল হাসানোর তাঁর এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল। তিনি ছিলেন অতিথিপরায়ণ, বন্ধুবৎসল ও উদার প্রকৃতির। তিনি সরলমনা হলেও আমাদের মানুষ করার ক্ষেত্রে ছিলেন খুব কঠোর, অন্যায় দেখলেই শাসন করতেন। আমার বাবা ছিলেন আমার সকল কাজের প্রেরণাপুরুষ ও আদর্শ। আমি আমার বাবার জন্য গর্ববোধ করি। আমি তাঁকে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি পরপারে যেন ভালো থাকেন এবং আমাদের আশীর্বাদ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষিত মানে মুখ বুঝা নয়
পরবর্তী নিবন্ধশরতের ছড়া