বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে আগেই। হাসপাতালের বিদ্যমান শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ থেকে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে গত ২৫ মে অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি এবার চিঠির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব উম্মে হাবিবা কর্তৃক ১৪ জুন (মঙ্গলবার) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল (১৫ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পেয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক এ চিঠির অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে সেটিও আমরা পেয়ে গেছি। এর মাধ্যমে আমাদের এ (চমেক) হাসপাতালের ১৩১৩ শয্যা থেকে ২২’শ শয্যায় উন্নীত হওয়ার সকল ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশাল বড় পাওয়া। বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের জন্য এই পাওয়া অনেকটা আর্শিবাদ বলা চলে। কারণ, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন সে অনুপাতে হাসপাতালের বাজেট-বরাদ্দ, জনবল সবই বাড়বে। এতে করে চিকিৎসা সেবার পরিসরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদন সংক্রান্ত গত ২৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়- ‘স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১৩১৩ শয্যা হতে ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হল। তবে শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত সকল বিধি-বিধান, আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম-কানুন অবশ্যই পালন করতে হবে।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর এ চিঠি দেয়া হয়।
আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক অনুমোদন সংক্রান্ত ১৪ জুন চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবর দেয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১৩১৩ শয্যা হতে ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা কার্যক্রম চালুকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হল। তবে শর্ত থাকে যে, এ সংক্রান্ত সকল বিধি-বিধান, আনুষ্ঠানিকতা ও নিয়ম-কানুন অবশ্যই পালন করতে হবে।’
এদিকে, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অনুমোদনের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের জনবল বাড়বে। একই সাথে রোগীর খাবার, ওষুধসহ সব খাতেই বরাদ্দ বাড়বে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার বিপরীতে আমরা বাজেট-বরাদ্দ পেয়ে আসছি। তবে চিকিৎসকের সংখ্যা বাদ দিলে হাসপাতালের জনবল কিন্তু ৫০০ শয্যার। এখন শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জনবলও বাড়তি পাওয়া যাবে। বাজেট-বরাদ্দ তো বাড়বেই।
অন্যদিকে, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিতে প্রশাসনিক অনুমোদনের সকল ধাপ সম্পন্ন হওয়ায় সুযোগ-সুবিধা কি পাওয়া যাবে-না যাবে, ওয়ার্ড ভিত্তিক শয্যা সংখ্যা পুনঃবিন্যাসসহ সার্বিক করণীয় পর্যালোচনায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, এতদিন ১৩১৩ শয্যার বাজেট-বরাদ্দ পেয়েছি। এখন ২২’শ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় সে অনুপাতে বাজেট-বরাদ্দ পাওয়া যাবে। শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়ার্ড ভিত্তিক শয্যা সংখ্যাও পুনঃবিন্যাসের প্রয়োজন পড়বে। সবমিলিয়ে সার্বিক করণীয় নির্ধারণে আমরা ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৃহস্পতিবার (আজ) এ সংক্রান্ত কমিটি চূড়ান্ত করা হবে। কমিটি বসে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের (বিদ্যমান ভবনে) বর্তমানে ১৩১৩ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কিছু কম-বেশি (প্রায় তিন হাজার)। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চলে আসছে। তবে সার্বিক চিত্র তুলে ধরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ তে উন্নীতকরণে সমপ্রতি প্রস্তাবনা পাঠায় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ৯ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। প্রশাসনিক অনুমোদিত শয্যা সংখ্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালের সক্ষমতা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। অনুমোদিত ১৩১৩ শয্যার অনুকূলে এমএসআর (ওষুধ, যন্ত্রপাতি, লিনেন, গজ-ব্যান্ডেজ, ক্যামিকেল ও রি-এজেন্ট) বাজেট বরাদ্দ দিয়ে ২৬০০-২৮০০ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান অত্যন্ত কঠিন ও দূরুহ। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন চাওয়া হয় চিঠিতে। এ প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ‘চমেক হাসপাতাল উন্নীত হচ্ছে ২২’শ শয্যায়/প্রস্তাবিত ১০ তলার স্থলে হবে ২০ তলা ভবন’ শিরোনামে গত ২২ মার্চ দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। হাসপাতাল প্রশাসনের প্রস্তাবনার ২০ দিনের মাথায় (২৮ মার্চ) এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনের স্বাক্ষরে এ চিঠি পাঠানো হয়। চমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ হতে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদানের লক্ষ্যে নির্মিত ভবন হস্তান্তরের প্রমাণক পত্রসহ অন্যান্য তথ্যাদি প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। এ নিয়ে ‘চমেক হাসপাতাল : ২২’শ শয্যার পথে এগোল আরো এক ধাপ/ তথ্য চেয়ে চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
চিঠি পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই চাহিত প্রমাণকপত্রসহ অন্যান্য তথ্যাদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় হাসপাতাল প্রশাসন। পরবর্তীতে এ প্রস্তাবনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ এপ্রিল এ সংক্রান্ত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ২৫ মে চমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩ হতে ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণ ও বর্ধিত শয্যায় সেবা চালুকরণে সম্মতি জ্ঞাপন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ‘চমেক হাসপাতাল : ১৩১৩ থেকে এখন ২২শ শয্যা/অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন-জনবলসহ সবখাতে বরাদ্দ বাড়বে’ শিরোনামে গত ২৬ মে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই অনুমোদনের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ ১৪ জুন চমেক হাসপাতাল ২২’শ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
