স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসবই পারে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু কমাতে

নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৮ মে, ২০২২ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বছরে ৩৭ লাখের বেশি শিশু জন্ম নেয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের প্রসব হয় বাড়িতে। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ প্রসূতিকে প্রসবকালীন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়না। যা মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা বলছেন, মা ও নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে নির্ধারিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসব করানো খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের প্রতিপাদ্যেও বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২৮ মে বাংলাদেশ সরকার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করে আসছে। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হবে যেতে’। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামেও এ দিবস পালিত হচ্ছে আজ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনী বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এ দিবসটি পালন করছে।
মা ও শিশুর জীবন রক্ষায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসবের বিকল্প নেই জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ও চমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলছেন, প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন বিলম্বিত প্রসব, বাধাগ্রস্ত প্রসব। এসব জটিলতা জরায়ু ফেটে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়াও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ আরো নানা জটিলতা বাড়িতে সন্তান প্রসবের কারণেই হয়ে থাকে। ইউনিসেফের এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, কোনো চিকিৎসক বা দক্ষ ধাত্রী ছাড়া বাড়িতে প্রসবের কারণেই অধিকাংশ প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। এজন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসব করানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসব করানো হলে প্রসূতি মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলেও চিকিৎসক দ্রুত চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু বাসা-বাড়িতে হলে এটি সম্ভব হয়না। জটিলতা দেখা দিলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এতে করে মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রসূতিকে অবশ্যই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার। একই পরামর্শ দিয়েছেন চমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. কামরুন্নেছা রুনা।
গর্ভাবস্থায় সেবাও সমান জরুরি জানিয়ে ডা. কামরুন্নেছা রুনা বলেন, অনেকেই গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারটি উপেক্ষা করে থাকেন। অথচ মা এবং মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য গর্ভকালীন সেবা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভধারণ পূর্ববর্তী সেবা : চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভধারণ পূর্ববর্তী সেবা বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গর্ভধারণের পূর্বেই যদি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া হয়, তাহলে ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, জন্মগত হৃদরোগসহ অনেক জটিল রোগ বা শারীরিক অবস্থা আগেই ডায়াগনোসিস হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পর স্থিতিশীল শারীরিক অবস্থায় গর্ভধারণ মা ও শিশুর জীবন বিপন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করে।
গর্ভকালীন সেবা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় অন্তত চারবার গর্ভকালীন সেবা নিতে হবে। এই সেবার মধ্যে রয়েছে- প্রসূতির শারীরিক পরীক্ষা, প্যাথলজিকাল পরীক্ষা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান ও চিকিৎসা সেবা প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ মায়েদের চিহ্নিত করা ও সেবা প্রদান, প্রসূতি ও প্রসূতির পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যত প্রসবের প্রকৃতি, সময় ও স্থান নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান। গর্ভকালীন অন্তত একবার সেবাগ্রহীতার হার ২০১১ সালে ছিল ৬৮ শতাংশ। ২০১৭-২০১৮ সালে এ হার ৯২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবা দানকারী থেকে সেবা গ্রহণের হার ছিল ৫৫ শতাংশ। যা ২০১৭-২০১৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৮২ শতাংশ হয়েছে।
প্রসবকালীন সেবা : প্রসূতি মায়েরা সন্তান জন্মদানের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা গ্রহণ করলেই কেবল প্রসবকালীন সেবা নিশ্চিত করা যাবে বলে জানান চিকিৎসকরা। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ মায়ের মৃত্যু ঘটে কোনো চিকিৎসক বা দক্ষ ধাত্রী ছাড়া বাড়িতে প্রসবের কারণে।
প্রসব পরবর্তী সেবা : একজন মায়ের প্রসব পরবর্তী সেবাও গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে অধ্যাপক ডা. কামরুন্নেছা রুনা বলেন, প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে প্রসব পরবর্তী ৬ সপ্তাহ সময়কালে রক্তক্ষরণ, জরায়ুতে সংক্রমণের মতো জটিলতাগুলো প্রসূতি মাকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ঠেলে দেয়। এছাড়াও মূত্রাশয়, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, রক্ত নালীতে রক্ত জমাট বাঁধা, মানসিক বিষন্নতা ইত্যাদি জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই প্রসব পরবর্তী সেবাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে প্রতীক পেয়ে প্রচারণায় প্রার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধরেলস্টেশন থেকে যাত্রীর ল্যাপটপ চুরি, গ্রেপ্তার ১