স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে

| রবিবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো। এমন অবস্থায় দেশে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা জরুরি যে, দেশের সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই বিভাগটির সঠিক পরিচালনার ওপর নির্ভর করে দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য। এই বিভাগটির স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা শতভাগ থাকা বাঞ্ছনীয়। এখানে কোন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা মানে দেশের মানুষের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমান। অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হচ্ছে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে সমপ্রসারিত, বিশাল এবং এর শাখা-প্রশাখা দেশের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সুবিস্তৃত। এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা যথেষ্ট। প্রশাসনিক কাঠামো মজবুত এবং প্রতিষ্ঠিত। তারপরও এই বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, সিন্ডিকেটের প্রভাবে এই জরুরি বিভাগের সঠিক সেবা অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে না। জেলা পর্যায়ে যত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে তার অধিকাংশের সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তাররা কোন না কোনভাবে জড়িত।
আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছে রোগীরা অনেক আগেই। প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী বাইরে যাচ্ছে; তাদের ভাষায় উন্নত চিকিৎসার জন্য। অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা দেশেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যাটা আস্থার, সমস্যাটা বিশ্বাসের। ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর হল আমাদের দেশের রোগীদের প্রধান গন্তব্যস্থল। ওইসব দেশে গিয়ে আমাদের রোগীরা লাখ লাখ ডলার ব্যয় করছে। অথচ আমাদের দেশে ওইসব রোগের চিকিৎসা অনেক কম ব্যয়েই হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যা হল রোগীরা ডাক্তার-হাসপাতালকে বিশ্বাস করতে চায় না। তারা মনে করে, ডাক্তার রোগীর স্বার্থে কাজ না করে হাসপাতালের স্বার্থে কাজ করছে। এ দেশে চিকিৎসা করে কোনো রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে আত্মীয়স্বজন বলতে থাকে, তাদের সেই স্বজনকে আগে থেকে বাইরে নিয়ে গেলে তার অবস্থা এত খারাপ হতো না। এই হলো আমাদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে অধিকাংশ লোকের ধারণা।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যে কী পরিমাণ অনৈতিকতা ও দুর্নীতি প্রবেশ করেছে, তা যারা কাছ থেকে বিষয়গুলোকে দেখছে তারা সেটা অনুভব করে। অন্য কোনো দেশে কেউ সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে পূর্ণকালীন চিকিৎসক ও অধ্যাপক হয়ে বাইরে গিয়ে চেম্বার সাজিয়ে চিকিৎসাসেবার প্রাইভেট ব্যবসা করতে পারে না।
পাঠক যতই অবগত হচ্ছেন, চরমভাবে হতাশ হচ্ছেন। ভীত, সন্ত্রস্তও হচ্ছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ত্রুটি, ছিদ্র আর অনিয়ম দুর্নীতি তা জেনে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ টিউবও সিরিঞ্জ ব্যবহার করে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের সরবরাহ করা পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্ল্যাভসের অনেক কিছুই মানহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কীসের লক্ষণ! যেসব চিকিৎসক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর মান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে আমাদের সজাগ ও সতর্ক করে দিলেন তারা তো বাহবা পাওয়ার যোগ্য। উল্টো দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে কোণঠাসা করতে তৎপর।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে বেশ সক্রিয়, তৎপর। অনেকগুলো মামলা হয়েছে, আরও অনুসন্ধান চলছে। দুদক স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক দুর্নীতি নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠুক এটাই এই মুহূর্তে আমরা চাই। বিশেষ করে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস রোগ শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরি স্থাপন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি কেনাসহ পিপিই, ফেস মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ যত ধরনের কেনাকাটা হচ্ছে তা কতখানি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার মধ্যে হচ্ছে সেটি বিশেষভাবে অনুসন্ধান, তদন্ত করে দেখুক দুদক।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার যে লকডাউন দিয়েছে তাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের গতি কমবে। তবে এখন বেশি প্রয়োজন হলো স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থাপনা। এই সময়ের মধ্যে করোনা আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর সঙ্গে জেলা পর্যায়ে হাইফ্লো নেজাল অক্সিজেন ক্যানোলার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কাজেই লকডাউনের সফলতা নির্ভর করছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর। তারা আরও বলেন, এই লকডাউন যদি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো যায়, তাহলে সংক্রমণ দ্রুত ২০০-৩০০-এর ঘরে নিয়ে আসা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে