স্বর্ণ বহন করার টাকার ভাগের ক্ষোভেই খুন কারচালক শাহ আলম

বাঁশখালীতে বস্তাবন্দি মরদেহের হত্যারহস্য উদঘাটিত

বাঁশখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:৫৭ অপরাহ্ণ

বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের পুরান ঘাট এলাকায় কারচালক শাহ আলমের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর তার হত্যারহস্য উৎঘাটিত হয়েছে।

এ হত্যার সাথে জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত শুক্রবার বিকালে পুকুরিয়া ইউনিয়নের পুরান ঘাট এলাকায় বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করার পর প্রথমে অজ্ঞাত মরদেহ হিসাবে নেয়া হলেও পরে নিহত কারচালক শাহ আলমের মেয়ে আয়েশা আক্তারের চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় করা সাধারণ ডায়েরির সূত্রে উদ্ধারকৃত স্থানে এসে মরদেহ শনাক্ত করেন তারা।

এরপর বাঁশখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মেয়ে কন্যা আয়েশা আক্তার।

পরে এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করে পিবিআই।

ঘটনার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত দু’জন হলো ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকার শাহ জামাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শহীদুল ইসলাম কায়সার প্রকাশ বেলাল(৩৬) ও বরিশালের উজিরপুর থানার নয়নাবাড়ি এলাকার মো. নুরুজ্জামানের ছেলে নুরুল আমিন রনি(৩০)।

রনি বর্তমানে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ চারিয়াপড়া এলাকায় বসবাস করে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে আজ রবিবার (৩১ অক্টোবর) পিবিআই’র বিভাগীয় পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।

তিনি জানান, নিহত শাহ আলম একজন প্রাইভটেকার চালক। গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির মালিক মো. বদরুজ্জামানের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন কিন্তু শাহ আলম বাসায় না ফিরলে তার পরিবার তার খোঁজ শুরু করে।

পরে তারা গাড়ির মালিক বদরুজ্জামানকে ফোন করে তার খোঁজ জানতে চান। তখন মালিক জানান এদিন তারা পটিয়া ভূমি অফিসে কাজ শেষ করে বিকালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় তাকে নামিয়ে দিয়ে যায় শাহ আলম।

এদিন বিকাল ৪টা ৭ মিনিটে শাহ আলমের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিক কল আসে। তার স্ত্রী ফোন রিসিভ করলেও অপর দিক থেকে কোন কথা বলেনি কেউ।

পরে তার কোনো সন্ধান না পাওয়ায় ২৯ অক্টোবর কোতোয়ালী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।

এদিন তার মেয়ে আয়েশা আক্তার ফেবেুকে তার পিতার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।

বিকাল পৌনে ৩টায় একটি নম্বর থেকে মেয়ে আয়েশা আক্তাররে নম্বরে একটি কল আসে।

ফোনে বলা হয় বাঁশখালীতে একটি মরদেহ পাওয়া গেছে এবং ফোন দেওয়া ব্যক্তি বাঁশখালীর বাসিন্দা বলে জানান।

তারা বাঁশখালী থানার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি শাহ আলমের বলে শনাক্ত করেন।

বাঁশখালীর পুকুরিয়ায় ঘটনাস্থলে হত্যাকারী বেলাল সহ পিবিআই দল

পিবিআই’র বিভাগীয় পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান আরো জানান, এ ঘটনায় পিবিআই তদন্তে নেমে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু ও বাঁশখালী তৈলারদ্বীপ সেতু এলাকার সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায়, ২৬ অক্টোবর সকাল ১০টা ৫৬ মিনিটে প্রাইভেট কারটি চট্টগ্রাম শহর থেকে বের হয়ে দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে শহরে ফিরে আসে।

পরদিন ২৭ অক্টোবর বিকাল ৫টা ২৮ মিনিটে গ্রেফতার বেলাল নম্বর প্লটে খুলে গাড়িটি চালিয়ে শহর থেকে বের হয়।

এদিন গাড়িটি আবার রাত ৮টা ২৬ মিনিটে তৈলারদ্বীপ ব্রিজ হয়ে বাঁশখালীতে প্রবেশ করে। পরে রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে পুনরায় তৈলারদ্বীপ ব্রিজ হয়ে রাত ১০টা ১ মিনিটে শাহ আমানত সেতু হয়ে চট্টগ্রামে প্রবেশ করে।

এ ঘটনায় আজ বিকাল ৪টায় আগ্রাবাদ চৌমুহনীর চাড়িয়াপাড়ার নিজ বাসা থেকে বেলালকে গ্রেফতার করা হয়। পরে নুরুল আমিন রনি নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল জানিয়েছে তার সাথে শাহ আলমরে স্বর্ণের বার বহন করা টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এজন্য সে শাহ আলমকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করে।

বেলাল আরো জানায়, শাহ আলম গাড়ির মালিক মো. বদরুজ্জামানকে কোর্ট বিল্ডিংয়ে নামিয়ে দিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করার জন্য কর্ণফুলী থানার আহসানিয়া পাড়ায় অবস্থিত তার রড সিমেন্ট বিক্রয়ের অফিসে যায়। বেলাল শাহ আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাণ ফ্রুটোর সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আগে থেকে রেখে দেয়। শাহ আলম তার অফিসে গেলে সেই প্রাণ ফ্রুটো খাইয়ে অচেতন অবস্থায় শাহ আলমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে।

শাহ আলমকে হত্যা করে অন্যদের সহযোগিতায় মরদেহ বস্তাবন্দি করে বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের পুরান ঘাট জামে মসজিদের ২০০ ফুট উত্তরে বাবুর ওয়ার্কসের উত্তর পাশে বাঁশখালী প্রধান সড়কের রাস্তার পূর্ব পাশে ফেলে আসে।

পিবিআই সুপার জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতার বেলালের অফিস রুম থেকে শাহ আলমের পরিহিত সেন্ডেল, রক্তমাখা বস্তা, ঘুমের ওষুধ, সিগারেটের অংশ ও নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি জব্দ করা হয়।

এরপর তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল বাঁশখালীর পুকুরিয়ায় আসে পিবিআই তদন্ত দল।

তারা ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করেন। এছাড়া মরদেহ গুম করার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি মুহুরিগঞ্জ হাইওয়ে থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানান তারা।

এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি কামনা করেছে শাহ আলমের পরিবারের সদস্যরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেকুয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে অস্ত্রসহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক