স্বপ্ন মেলেছে ডানা

প্রত্যাশার ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিত্তি স্থাপন কাল, উদ্যোগ মা ও শিশু হাসপাতালের।। জনগণের টাকায় হবে এই হাসপাতাল : এম এ মালেক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উদ্যোগে এ ক্যান্সার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে কাল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বহুল প্রত্যাশার এই হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, মরণব্যাধি ক্যান্সার মহামারী আকার ধারণ করেছে। শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সব বয়সের মানুষই আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ।
আজাদী সম্পাদক বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ক্যান্সারের চিকিৎসা আছে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগী ভালো হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ক্যান্সারের পূর্ণাঙ্গ এবং সমন্বিত কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। হাজার হাজার ক্যান্সার রোগী চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। অবস্থাপন্নরা বিদেশ যেতে পারলেও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ক্যান্সারের চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য শত কোটি টাকা প্রতি বছর বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল একটি ক্যান্সার হাসপাতাল এবং রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।
এম এ মালেক জানান, জনগণের টাকায় এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হবে। ১২০ কোটি টাকার এই হাসপাতালের জন্য সরকার জায়গা দিয়েছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে হাসপাতালের জন্য ভূমির ব্যবস্থা করেছেন। আমরা জনগণের কাছে হাসপাতালের জন্য সহায়তা চেয়েছি। মানুষ অকাতরে দান করেছে। আরো অনেকেই দান করার আশ্বাস দিয়েছেন। ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। ফান্ড সংগ্রহের জন্য নিরলসভাবে কাজ চলছে।
আজাদী সম্পাদক বলেন, আমরা আশা করি, চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষ এই মহতী কাজে অংশগ্রহণ করবে। সকলের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায়
যথাসময়ে ক্যান্সার হাসপাতালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা এগিয়ে এলে এই প্রকল্প সহজেই বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, কোনো ভালো কাজের উদ্যোগ কখনো থেমে থাকে না। ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সহায়তা কামনা করেন।
এম এ মালেক বলেন, প্রকল্পটির জন্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফকে। তিনি একটি দক্ষ টিমের সহায়তায় ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য আর্কিটেকচারাল এবং স্ট্রাকচারাল ডিজাইন তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ থেকেও প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার আমরা বহুল প্রত্যাশার এই ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাসেবা চলছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিভাগের জনসংখ্যার তুলনায় বিদ্যমান সেবা ব্যবস্থা বড়ই অপ্রতুল। বর্তমানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০ জন এবং অন্তঃবিভাগে ১০ শয্যায় ১০ জনের চিকিৎসাসেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ প্রতিদিনই শয্যার অভাবে অনেক রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে কেমোথেরাপি গ্রহণ করেছে ৪ হাজার ১৪২ জন রোগী এবং অন্তঃ ও বহির্বিভাগে মোট ৬ হাজার ৭৭৬ জন রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। তাই বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর বৃদ্ধির হারের বাস্তবতায় চট্টগ্রামে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যান্সার হাসপাতাল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় প্রধান নিয়ামক হলো অর্থ। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিজন মানুষ যদি ১০০ টাকা করে এই ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য দান করেন, তাহলে এক মুহূর্তেই ৭০ কোটি টাকার একটি তহবিল হয়ে যাবে। চট্টগ্রামের জনগণের দানে জনগণের জন্যই একটি সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আগামী দেড় বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের জেনারেল সেক্রেটারি ডা. আঞ্জুমান আরা ইসলাম, ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব, হাসপাতাল ভবনের অনারারি প্রজেক্ট পরিচালক প্রকৌশলী এম আলী আশরাফ, মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তাক আহমেদ, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডা. অসীম বড়ুয়া, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক, ডা. আরিফুল আমিন, ডা. ফাহিম হাসান রেজা, ডা. শেফাতুজ্জাহান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, ইঞ্জিনিয়ার জাবেদ আবছার, ডা. কামরুন্নাহার দস্তগীর, রেখা আলম চৌধুরী, লায়ন হারুন ইউসুফ, এস এম কুতুবউদ্দিন ও আহসান উল্ল্যাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন মেয়রসহ ১১ কাউন্সিলর প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধকী ঘটছে মিয়ানমারে