কী ঘটছে মিয়ানমারে

২৪ মন্ত্রী বরখাস্ত, সু চি কোথায়, রোহিঙ্গা নিয়ে ভয় জাতিসংঘের

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে কী ঘটছে? কোথায় আছে সু চি? স্পষ্ট উত্তর নেই কারো কাছে। এমন পরিস্থিতিতে জনমনে ক্ষোভ জমছে। তবে সেই ক্ষোভের প্রকাশ এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ফলে দেশটিতে এখনও থাকা ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের দুর্দশা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ। সোমবার বৈশ্বিক সংস্থার এক মুখপাত্র এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার আলোচনা হওয়ার কথা। অপরদিকে ক্ষমতা দখলের প্রথম দিনে ক্ষমতাচ্যুত সু চির সরকারের ২৪ জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। তাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের। সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জোরাল হচ্ছে। কিন্তু কোথায় আছেন সু চি? অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও সেনাবাহিনী এখনও সু চিকে কোথায় আটকে রেখেছে তা নিয়ে মুখ খুলেনি। খবর বিডিনিউজের।
মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোমবার ভোরে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তারা ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে আটক করে। ওই দিন এনএলডির আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়। ক্ষমতা দখলের পর সেনাবাহিনী দেশজুড়ে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
কোথায় আছেন সু চি? : সোমবার সু চিকে আটকের পর কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সেনাবাহিনী বা অন্য কোথাও থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএলডির এক এমপির বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরকে উদ্বিগ্ন না হতে বলা হয়েছে। যদিও আমরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছি। যদি আমরা বাড়িতে তাদের অবস্থানের কোনও ছবি হাতে পেতাম তাও কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
সোমবার এনএলডির বেশ কয়েকজন এমপিকে আটক করা হয়। তাদেরকেও রাজধানী নিপিধোতে তাদের নিজ নিজ সরকারি বাসভবনে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
রয়টার্স জানায়, এনএলডির কেন্দ্রীয় তথ্য কমিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কী তোয়ে ফেইসবুকে এক পোস্টে ‘সু চির স্বাস্থ্য ভালো আছে’ বলে জানিয়েছেন। গতকালের ওই পোস্টে তোয়ে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন সু চির শরীর ভালো আছে এবং তাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।
এনএলডির এক সদস্য একে ‘খোলা আকাশের নিচে বন্দিশালা’ বলে বর্ণনা করেন। অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া মিয়ানমারের এক সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, অভ্যুত্থানের সময় যেসব আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক নেতাদের আটক করা হয়েছিল গতকাল তাদের বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সাগাইং অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী মিন্ত নাইংকেও সেনাবাহিনী আটক করেছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি বলেন, তাকে একটি ডরমিটরিতে রাখা হয়েছিল এবং তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়েছে। আমি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা সব থেকে ভালো কিছুর আশা করেছিলাম, কিন্ত আমাদের সঙ্গে সব থেকে খারাপটাই ঘটছে।
মিয়ানমারে কী ঘটছে? : সেনা অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও অস্বাভাবিক রকম শান্ত হয়ে আছে মিয়ানমার। সোমবার রাতে এবং গতকাল সকালে সব বড় বড় নগরীর বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা ছিল। সব সড়কেই সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। আর রাতে কারফিউ জারি হয়েছে।
সোমবার অভ্যুত্থানের পর মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গতকাল সকালে সেগুলো অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সড়কে যে কয়জনকে দেখা গেছে তাদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ। তাদের কেউ কেউ গণতন্ত্রের জন্য তাদের কঠিন লড়াই ভেস্তে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপও করেছেন। ইয়াংগুনে সোমবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিএম বুথগুলোও অচল হয়ে পড়েছিল। গতকাল সকাল থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়েছে। লোকজনকে লাইন ধরে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলতে দেখা গেছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় তারা হাতে নগদ অর্থ জমা করতে চাইছেন। তবে সোমবার বাজারে লোকজন যেভাবে হুড়োহুড়ি করে নিত্যপণ্য কিনছিল গতকাল সেই ভিড় বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
ইয়াংগুনের বিমানবন্দর গতকালও বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রাজধানী নিপিধোতে গতকালও সেনাসদস্যদের ট্যাংক ও ট্রাক নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
জনমনে জমছে ক্ষোভ : মিয়ানমারের এই অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত রক্তপাত হয়নি। জনগণ এখনও শান্ত হয়ে আছে। জাপান, থাইল্যান্ড ও নেপালে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হলেও মিয়ানমারে তেমন কিছু দেখা যায়নি।
যদিও সু চি আটক হওয়ার আগে এক বিবৃতিতে জনগণকে রাস্তায় নেমে এ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে গেছেন বলে দাবি তার দল এনএলডির। তবে প্রতিবাদ যে একেবারে শুরু হয়নি তাও নয়। মিয়ানমারের চিকিৎসকদের একটি দল কালোব্যাজ পরে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভয় জাতিসংঘের : মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের ফলে দেশটিতে এখনও থাকা ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের দুর্দশা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ। সোমবার বৈশ্বিক এ সংস্থার এক মুখপাত্র এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে হওয়া অভ্যুত্থান নিয়ে গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তার আগের দিন জাতিসংঘের মুখপাত্র মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এ উদ্বেগ জানালেন।
২০১৭ সালে দেশটির রাখাইনে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমানা টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলে আসে। প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা ওই রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী শিবিরে জীবন কাটাচ্ছেন।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, এখনো ৬ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে আছে, যাদের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার বিভিন্ন শিবিরে আটকা। তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছে না; স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। আমাদের ভয় হচ্ছে, এই ঘটনা তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিতে পারে।
মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের উপস্থিতি ছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলেও নিরাপত্তা পরিষদের দূতরা দেশটিতে গিয়ে অং সান সু চি ও মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে রাখাইনে অভিযান নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছিলেন।
২৪ মন্ত্রী বরখাস্ত : বাংলানিউজ জানায়, ক্ষমতা দখলের প্রথম দিনে ক্ষমতাচ্যুত সু চির সরকারের ২৪ জন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে সেনাবাহিনী। তাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের। সোমবার সিঙ্গাপুরভিত্তিক গণমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়া এ তথ্য জানায়। নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপির কয়েকজন সদস্য রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্ন মেলেছে ডানা
পরবর্তী নিবন্ধবাছাই করা ১০ কোম্পানির প্রস্তাব বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে