স্বপ্নের কাছাকাছি : পাল্টে যাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি

| শুক্রবার , ৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

আজ শেষ হচ্ছে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ। মধ্যরাতেই নদীর তলদেশে দুই পাড় সুড়ঙ্গ পথে আবারো এক হচ্ছে। এর আগে প্রথম টিউবের বোরিং কাজ শেষ হয় মাস কয়েক আগে। বর্তমানে প্রথম টিউবে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। মাসখানেকের মধ্যে দ্বিতীয় টিউবেও রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে। আগামী বছর টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। ৬ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘নির্ধারিত সময়ের আগে খুলে দেওয়ার আশা’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বলা হয়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিয়ে আলোচনা হয়। এতে টানেলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে টানেলের ১ম টিউবের ৫৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ লেন স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত টানেলের ২য় টিউবের ৮৬ দশমিক ২০ শতাংশ বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে এই বোরিং কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে। আনোয়ারা থেকে করে আসা বোরিংয়ের মাধ্যমে পতেঙ্গার সাথে সুড়ঙ্গ পথ যুুক্ত হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, টানেলের প্রয়োজনীয় শতভাগ অর্থাৎ ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্ট এবং রিজেক্টেড সেগমেন্টসমূহের সমপরিমাণ সেগমেন্টের পুনঃনির্মাণ কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। এই টানেল সময়ের আগে খুলে দেওয়ার কারণে ব্যয় কিছুটা হলেও সাশ্রয় হবে। শুক্রবার মধ্যরাতে এর দ্বিতীয় মুখ উন্মোচন করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। তবে এখনই পরিবহন যাতায়াত করতে পারবে না। পুরোপুরি সম্পন্ন করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’র আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম শহর এবং নদীর অপর পাড়ের আনোয়ারা নতুন শহর হিসেবে গড়ে উঠবে। টানেলের এক প্রান্তে আনোয়ারায় ভারী শিল্প এলাকা এবং অন্য প্রান্তের চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। কর্ণফুলী নদী দিয়ে বিভক্ত দুই প্রান্তকে যুক্ত করতে সরকার স্বপ্নের এই টানেল বাস্তবায়ন করছে। এখানে উল্লেখ্য, ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক যৌথভাবে অর্থায়ন করছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি চালু হলে চট্টগ্রাম তথা দেশ পাল্টে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
আসলে টানেল প্রকল্পকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ইকোনমিক জোনসহ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলছে বলে জানা যায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড), বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় সার কারখানা (কাফকো), চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডে (সিইউএফএল) এবং চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম সমপ্রসারণ করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি স্টেশনসহ বহুবিধ শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।
বলা হচ্ছে, মিয়ানমার হয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তিসহ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে টানেল নির্মাণের কাজ। টানেল নির্মাণে চট্টগ্রাম শহরসহ সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তথা কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজতর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত হলে এলাকার আশে পাশে শিল্পোন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে দারিদ্র দূরীকরণসহ দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন, শিল্পকারখানার বিকাশ সাধন এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের ফলে বেকারত্ব দূরীকরণসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। বলা যেতে পারে, প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হলে পাল্টে যাবে দেশের অর্থনীতি। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় স্থান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে