স্বপ্নজয়ী মেয়েদের আনন্দযাত্রা

বিপুল সংবর্ধনায় বরণ, ছাদ খোলা বাসে শিরোপা উল্লাস, পথে পথে উৎসব

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

ছাদ খোলা বাস। সে বাসজুড়ে ফুটবলারদের ছবি আর চ্যাম্পিয়ন লেখা স্টিকার। বাসটি ঘুরছে রাজধানীর নানা সড়কে। দুপাশ থেকে মানুষ ফুল ছিটাচ্ছে, বিতরণ করছে মিষ্টি। এমন দৃশ্য বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে কবে কে দেখেছে। আগে দেখেনি বলে এখন হবে না তাতো আর হয় না। গতকাল ছিলো ঠিক এমন স্বপ্নময় একদিন। কারণ দেশে ফিরেছে ইতিহাস গড়া বাংলার মেয়েরা। ট্রফি হাতে পা রেখেছে বাংলার মাটিতে। তাইতো এত আয়োজন, এত উৎসব। গত সোমবার দক্ষিণ এশিয়া নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। ১৯ বছর আগে যে কাজটি করেছিলেন জয়, আলফাজ, ফরহাদ, মতিউর মুন্নারা এবার সেই কাজটি করেছে সাবিনা, কৃষ্ণকা, মনিকারা। এমন আনন্দ আর অর্জনে কার না হৃদয় ছুঁয়ে যায়? এমন গৌরব গাঁথা যারা রচনা করেছেন বাংলার সেই সব মেয়েদের বরণটাও নিশ্চয়ই তেমনই হওয়া চায়। আর সেটাই করেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। হৃদয়ের সব উষ্ণতা, পুষ্প বৃষ্টি আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে বরণ করা হলো সাবিনা, কৃষ্ণা, রুপনা আর রিতু মনিদের। এছাড়া তাদের ঘরে ফেরা রাঙাতে ছাদ খোলা বাসের ব্যবস্থা করেছে সরকারের পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। এক রাতেই তৈরি করা হয় বিশেষ এই বাস। সাজানো হয় লাল-সবুজ রঙ ও চ্যাম্পিয়ন লেখা স্টিকারে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে তখন কেবল উড়াল দিয়েছে ফুটবলারদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। তার আগেই যেন উৎসবের রঙে রঙ্গিন হয়ে গেছে পুরো ঢাকা শহর। সময় যতই গড়িয়েছে ততই যেন রঙের আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এক ঘণ্টার বিমান যাত্রা কবে শেষ হবে সে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা যেন বিমান আরোহী ফুটবলারদের ও ঢাকায় সমবেত হাজার হাজার সমর্থকের। যে উৎকন্ঠা আনন্দের, যে উৎকন্ঠা ভালবাসার, যে উৎকন্ঠা হৃদয়ের উঞ্চতায় আলিঙ্গনের, যে উৎকন্ঠা ‘ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা’ এর স্বদেশ ভূমিতে বীরের বেশে পা রাখার। অবশেষে এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ। ঘড়ির কাটা দুইটা বাজতে সামান্যই বাকি। ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
ঠিক তখনই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিদারুণ ব্যস্ততা। বাংলার সোনার মেয়েরা যে পা রাখছে সোনার বাংলায়। বিমান থেকে একে একে নেমে এলেন নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, দলের প্রধান কারিগর গোলাম রব্বানী ছোটন, বাফুফে মহিলা ফুটবল উইং এর চেয়ারম্যান মাহফুজা আকতার কিরনসহ দলের স্বপ্ন সারথীরা। বিমানবন্দরের বাইরে তখন সমর্থকদের ভীড়। সময়ের সঙ্গে সে জনস্রোত রূপ নেয় জোয়ারে। হাতে হাতে পতাকা ও ব্যানার, কণ্ঠে স্লোগান। সুসজ্জিত ব্যান্ড দল বাজাতে থাকে জয় বাংলার, বাংলার জয়। বিমানবন্দরের ভেতরে তখন জয়ের গৌরব নিয়ে দেশে ফেরা নারী ফুটবল দলের প্রত্যেককে স্বাগত জানানো হচ্ছে ফুলের মালায়। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ও অন্য কর্তারা বরণ করে নেন সাবিনা-মারিয়া-কৃষ্ণাদের।
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরুতেই কেক কাটা হয়। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী কেক তুলে দেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের মুখে। শিরোপা জয়ী অধিনায়কই শুধু নন, তিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতাও। ক্রীড়ামন্ত্রী এরপর একে একে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের গলায় পরিয়ে দেন ফুলের মালা। একটু পর দুহাতে ট্রফি উঁচিয়ে চওড়া হাসিতে এগিয়ে যান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। তাকে অনুসরণ করেন গোটা দল। বিমানবন্দরের বাইরে তখন অপেক্ষায় হাজারও জনতা। অনেকের হাতেই জাতীয় পতাকা, নানা রকম ব্যানার। বিকেএসপির একটি বড় দলও দেখা যায় সেখানে লাইন ধরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মেয়েদেরকে বরণ করে নিতে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত চারপাশ।
বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় মেয়েদের সেই স্বপ্নযাত্রার বাহন, ছাদ খোলা বাস। সেই বাসে ওঠার সময়ও মেয়েদের আবার ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এরপর শুরু হয় স্বপ্ন যাত্রা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রথমবারের মত ছাদ খোলা বাসে করে শহরের নানা প্রান্ত প্রদক্ষীণ করে বাসটি যায় মতিঝিলে বাফুফে ভবনে। মেয়েদেরকে বরণ করে নেওয়া হয় সেখানেও। আর সেখানে তাদের চরম উঞ্চতায় বরণ করেন বাংলাদেশের ফুটবলের অভিভাবক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজি সালাউদ্দিন।
উৎসবের শুরুটা হয়েছে সেই কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকেই। বিমানবন্দরে বাংলাদেশী যাত্রী এবং নেপালের যাত্রীদের ছবির আবদার মেঠাতে ব্যস্ত থাকতে হয় বাংলার সোনার মেয়েদের। এরপর কাঠমান্ডু থেকে উড়াল দেওয়ার পর ফ্লাইটেও এক দফায় উদযাপন হয়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয় দলকে। সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও বিমানের ক্রু সানোয়ার হোসেন মিষ্টিমুখ করান মেয়েদের। কেক কাটার পর্ব ছিল বিমানেও। গত কয়দিনে যেন স্বপ্নের ঘোরেই কাটছে সাবিনা, কৃঞ্চা, মারিয়াদের দিন। যে গৌরব গাথা রচনা করেছে বাংলার মেয়েরা সাফ ফুটবলের ট্রফি জিতে তাদের এই সময়টা তেমনইতো হওয়া উচিত। কারণ এরাই যে দেশের গর্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই ট্রফি দেশের সব মানুষের
পরবর্তী নিবন্ধকুতুবদিয়ার অদূরে ১২ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী