স্থায়ী-অস্থায়ী ২২২ হাটে আজ শুরু হচ্ছে পশু বেচাকেনা

এর মধ্যে ১০টি নগরীতে, বাকিগুলো ১৫ উপজেলায় ।। চট্টগ্রামে এবার চাহিদা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার, কোরবানির পশুর সংকট হবে না

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২০ জুন, ২০২৩ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় উৎপাদনে এবার পূরণ হবে না চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর চাহিদা। কারণ সম্ভাব্য কোরবানিদাতার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হওয়া পশুর ঘাটতি আছে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারিরা কোরবানি পশু নিয়ে আসবেন এখানকার বাজারগুলোতে। তাই শেষ পর্যন্ত পশুর সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রামের ২২২টি স্থায়ীঅস্থায়ী হাটে আজ মঙ্গলবার থেকে কোরবানি পশু বিকিকিনি শুরু হবে। এর মধ্যে নগরে ১০টি এবং বাকি হাটগুলো বসবে ১৫ উপজেলায়। পশুর হাটগুলো তদারকি করবে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গঠিত ৭৩ টি মেডিকেল টিম।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। এর বিপরীতে স্থানীয় ৮ হাজার ২২০টি খামারে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে সংকট আছে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি কোরবানি পশুর। এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট করা পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৩২৫টি। এছাড়া ৭১ হাজার ৩৩৩টি মহিষ, ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭৪৩টি ছাগল এবং ৫৮ হাজার ৬৬২টি ভেড়া রয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর মধ্যে নগরের কোতোয়ালী থানায় চার হাজার ১১৭টি, ডবলমুরিংয়ে ৮ হাজার ৫৮৩টি এবং পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ১৭ হাজার ৯২১টি পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এছাড়া মীরসরাই উপজেলায় ৬০ হাজার ৭৩৯টি, সীতাকুণ্ডে ৪৬ হাজার ৪৮৪টি, সন্দ্বীপে ৭৮ হাজার ৪৬৬টি, ফটিকছড়িতে ৫৬ হাজার ২৩০টি, রাউজানে ৪৫ হাজার ৬১৭টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৪৯ হাজার ৭৩টি, হাটহাজারীতে ৪৬ হাজার ৯৫১টি, বোয়ালখালীতে ৪৭ হাজার ১৭৬টি, পটিয়ায় ৭৪ হাজার ৫১২টি, চন্দনাইশে ৪৩ হাজার ৪৮১টি, আনোয়ারায় ৬৬ হাজার ২১৫টি, সাতকানিয়ায় ৪৫ হাজার ৩২টি, লোহাগাড়ায় ৪৮ হাজার ৪৫৮টি, বাঁশখালীতে ৪৫ হাজার ৮৯৯টি, কর্ণফুলীতে ৫৭ হাজার ২১১টি হৃষ্টপুষ্ট করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর আজাদীকে বলেন, কোরবানি পশুর সংকট হবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে পশু নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও পশু বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন। তাই যে সংকট আছে তা পূরণ হয়ে যাবে।

এদিকে নগরে স্থায়ী হাট আছে তিনটি। এগুলো হচ্ছেসাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। এছাড়া নগরে আরো সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এগুলো হচ্ছেকর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ।

গতকাল সোমবার নগরের বিভিন্ন অস্থায়ী হাট পরিদর্শনে দেখা গেছে, কয়েকটি বাজারে অল্প গরু এসেছে। বাজারগুলোতে সামিয়ানা টাঙ্গানোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি চলছে। বৈদ্যুতিক সংযোগ, মাঠ পরিষ্কার, খুঁটি স্থাপনসহ নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন ইজারাদারের প্রতিনিধিরা। বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠে বসা পশুর হাটের ইজারাদার ওয়াহিদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আজকে (গতকাল) প্রস্তুতি চলছে। এরপরও আশেপাশের এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন বাজারে গরু নিয়ে আসে। ক্রেতাবিক্রেতার সুবিধার্থে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করেছি। তিনি জানান, চাপাইনবাবগঞ্জ এবং ফরিদপুরের বেপারিরা এ বাজারে পশু নিয়ে আসবেন। বেপারিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা রাওয়ানা হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকতা হলেও আগামীকাল বুধবার থেকে পুরোদমে বাজার শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগরের বাইরে ১৫ উপজেলায় স্থায়ী ৫৮টি হাট রয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী পশুর হাট বসবে ১৫৫টি। উপজেলার স্থায়ীঅস্থায়ী হাটগুলোর মধ্যে মীরসরাইয়ে ২১টি, সীতাকুণ্ডে ১০টি, সন্দ্বীপে ১৪টি, ফটিকছড়িতে ৩০টি, রাউজানে ২২টি, রাঙ্গুনিয়ায় ২০টি, হাটহাজারীতে ৭টি, বোয়ালখালীতে ১২টি, পটিয়ায় ১০টি, চন্দনাইশে ১৪টি, আনোয়ারায় ১৫টি, সাতকানিয়ায় ৭টি, লোহাগাড়ায় ১৬টি, বাঁশখালীতে ১১টি এবং কর্ণফুলীতে ২টি হাট রয়েছে।

উল্লেখ্য, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর (২০২২) চট্টগ্রামে কোরবানি দেওয়া হয়েছিল ৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৫০টি গবাদিপশু। এর আগে ২০২১ সালে ৭ লক্ষ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি, ২০২০ সালে ৭ লক্ষ লাখ ৩৫ হাজার ৫৫৬টি, ২০১৯ সালে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৮৯টি পশু জবাই দেয়া হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের আগে চিনির দাম কেজিতে বাড়ল ২৫ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধ‘অনুমোদন ছাড়া পশুর হাট বসানো যাবে না’