পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর অফিসের সেফটিক ট্যাংকে লাশ গুম করেছিলেন শওকত আলী (৬৫)। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার পাঁচ মাস পর গত ৭ এপ্রিল নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির সেই অফিসের ট্যাংক পরিষ্কারের সময় অজ্ঞাতনামা পরিচয়ের মহিলার গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধারের দুই মাস পর এ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচন করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অবশেষে হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্বামী শওকত আলীকে নগরীর খুলশী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি উত্তর বিভাগের উপ–পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিহত নারীর নাম লিপি আক্তার। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল। তিনি শওকত আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী। গ্রেপ্তার শওকত আলী এমজিএইচ গ্রুপের নাসিরাবাদ শাখার ক্লিনার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। উপ–পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, পারিবারিক কলহের কারণে ২০১৩ সালে শওকত আলী ও লিপি আক্তারের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের তিন থেকে চার বছর পর তারা আবার এক সঙ্গে স্বামী–স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিল। তাদের মধ্যে আবারো পারিবারিক কলহের জেরে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর শওকত আলী লিপি আক্তারকে শ্বাসরোধ করে বাসায় হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করার জন্য নিজ অফিসে এনে সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডটির কোনো প্রকার ক্লু না থাকায় অধিক গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়। মরদেহটি যখন উদ্ধার হয় তখন লাশটি বিকৃত, গলিত এবং দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে পরিচয় শনাক্ত করতে অনেক দেরি হয়। প্রকৃত ঘটনা জানতে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করতে আশপাশের সিসিটিভিতে দীর্ঘদিনের ফুটেজ সংরক্ষিত না থাকায় প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করাও সম্ভব হচ্ছিল না। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলের পাশে এমজিএইচ গ্রুপের অফিসের সব স্টাফদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তের অংশ হিসাবে সব স্টাফের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য সংগ্রহ করে যাচাই–বাছাই করা হয়। বেশিরভাগ স্টাফদের নজরদারিতে রাখা হয়। এরমধ্যে কিছু কিছু স্টাফের মোবাইল ফোনের কললিস্ট নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। একপর্যায়ে শওকত আলীর প্রাপ্ত তথ্য এবং সিডিআরে প্রাপ্ত তথ্যে গরমিল পরিলক্ষিত হওয়ায় তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের কথাটি স্বীকার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি–উত্তর) মো. কামরুল হাসান।