স্ত্রীকে বলেছিলেন ডিসেম্বরে দেশে ফিরবেন সেনা সদস্য জসিম

| বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আফ্রিকায় শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা আত্মীয়-স্বজনদের বুক ফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। খবর বাংলানিউজের।
মৃত্যুর আগে স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তার। বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসে দেশে চলে আসবেন। কিন্তু এখন আসবে তার নিথর দেহ। তার স্ত্রী কোনোভাবেই স্বামীর এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। গতকাল বুধবার নিহত জসিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন আসছেন। তার স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। মৃত্যুর সংবাদ শুনে পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। নিহত মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়ার ছেলে। ২০০৯ সালে জসিম সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। ২০২১ সালে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যান।
নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, গত সোমবার রাত ১০টার দিকে ফোন দিয়ে আমার খবর ও দুই ছেলের খবর নিয়েছে। বলেছে, রাতে কড়া টহল আছে। পরের দিন কথা বলব। পরের দিন সকালে আমার কাছে সিলেট ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফোন আসে। আমার খোঁজ খবর নেয়। এরপর যেন আমার ভেতরটা কেমন করে উঠলো। পরে আমার জায়ের (স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী) কাছে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পাই। এখন আমার দুই ছেলে নিয়ে কোথায় যাব। আমার তো কিছু নাই। স্বামীর বেতনের টাকা দিয়েই সংসার চলত। আজ দেশের জন্য শহীদ হয়েছে আমার স্বামী। সরকারের কাছে আমার দাবি, দুই সন্তানের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা যেন করে দেয়। জীবিত স্বামীকে দেখতে পাইলাম না, তার মরদেহ যেন দ্রুত দেশে আনা হয়। নিহতের বাবা মো. নূর মিয়া বলেন, আমার ছেলে মিশনে গিয়ে শহীদ হয়েছে। এখন তার স্ত্রী ও দুই ছেলের জন্য সরকার যেন পদক্ষেপ নেয়।
বিজয়ননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম ইফরান উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখনো অফিসিয়ালি কোনো ডুকমেন্ট পাইনি। মরদেহ আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার সময় সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে (বাংলাদেশ সময় ০১৩৫ ঘণ্টা, ০৪ অক্টোবর) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজড এঙপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। এতে জসিমসহ তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন- সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১), নিলফামারীর ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ টিট পাড়ার সৈনিক জাহাংগীর আলম (২৬) এবং সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার বাড়াক রুয়া গ্রামের সৈনিক শরিফ হোসেন (২৬)। এতে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিজেলের দাম কমাতে সরকারের দ্বারস্থ বিজিএমইএ
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে পাহাড় ধস, সাজেকে ১০ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক