ডিজেলের দাম কমাতে সরকারের দ্বারস্থ বিজিএমইএ

| বৃহস্পতিবার , ৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে চাপে পড়া রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনে কিছুটা ব্যয় সাশ্রয়ে ডিজেলের দাম কমাতে সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে বিজিএমইএ। বিশ্ববাজারের নিম্নমুখী দরের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজেলের দাম কমিয়ে আনতে অনুরোধ করে রপ্তানিকারকদের এ সংগঠন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসানের পাঠানো ওই চিঠিতে লোডশেডিংয়ের সময় কারখানা চালু রাখতে জেনারেটর ব্যবহারে বাধ্য হওয়ায় পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ডিজেলের দাম কমানোর অনুরোধের কারণ ব্যাখ্যা করে বিজিএমইএ সহ সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, গত ৩/৪ মাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের মিল কারখানার অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। সরকারের নির্দেশনা মেনে কারখানাগুলোতে ছুটি রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুতের ওপর চাপ কমালেও লোডশিডিং পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনও নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় শিল্পাঞ্চলে অন্তত চার ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
তার ভাষ্য, সরকার একদিকে বিদ্যুৎ দিতে পারছে না। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে তেল কিনব সেটার দামও বাড়িয়ে রেখেছে। এভাবে তো কারখানা চালানো যাবে না। ডিজেলের পাশাপিাশি গ্যাসচালিত কিছু জেনারেটরও রয়েছে। কিন্তু গ্যাসের চাপ কম হওয়ার কারণে এসবও চালানো যাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে অনেক এলাকায় অধিকাংশ সময় ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি ব্যয় কমাতে ডিজেলের চড়া দাম কমিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি তোলেন।
কোভিড মহামারী লকডাউন উঠে যাওয়ার পরপরই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে গত ৬ অগাস্ট সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সাড়ে ৪২ শতাংশ বেড়ে হয় প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। এসময় পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়িয়ে করা হয় যথাক্রমে প্রতি লিটার ১৩০ ও ১৩৫ টাকা। পরে গত ২৯ অগাস্ট শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ডিজেল-কোরোসিনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১০৯ টাকা করা হয়। পেট্রোলের দাম ১২৫ টাকা এবং অকটেনের দাম করা হয় ১৩০ টাকা। ডিজেলের ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পাশাপাশি আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামানো হয়। তবে এখনও ডিজেল আমদানির বিভিন্ন পর্যায়ে ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্কভার রয়ে গেছে।
ডিজেলের মূল্য কমানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে পোশাক ব্যবসায়ীদের নেতা আজিম বলেন, এ ধরনের অতি জরুরি পণ্য বিপণন করতে গিয়ে সরকার কোনোভাবেই ব্যবসা করতে চাইতে পারে না। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমে এসেছে। সেই বিবেচনায় কমানো যেতে পারে। সরকার জ্বালানি তেল থেকে যে পরিমাণ ভ্যাট-ট্যাঙ নিচ্ছে সেটাও পর্যালোচনা করার দাবি জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া ‘রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের সাথে সমন্বয় করে ডিজেল সরবরাহকরণ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন কাজে জ্বালানির অপরিহার্যতা অত্যাধিক। বর্তমানে কারখানাগুলোতে চরম বৈদ্যুতিক লোডশেডিং চলছে। এই লোডশেডিং চলাকালিন কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমরা জেনারেটর ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছি। এতে ডিজেলের চাহিদা বাড়ছে। ২০২১ সালে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা থাকলেও ২০২২ সালে এসে তা ১০৯ টাকা হয়েছে। বহির্বিশ্বে ডিজেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে স্থানীয় পর্যায়ে ডিজেলের দাম পুর্ননির্ধারণ করা হলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ বিপর্যয়ের তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রীকে বলেছিলেন ডিসেম্বরে দেশে ফিরবেন সেনা সদস্য জসিম