সোনাদিয়াসহ সরকারি-বেসরকারি ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল

| সোমবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কাজের অগ্রগতি ‘সন্তোষজনক’ না হওয়ায় এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিবেচনায় সরকারি ও বেসরকারি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করা হয়েছে, যেগুলো আলোচনার টেবিলে ছিল। গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় পাঁচ বছর পর বেজার গভর্নিং বডির বৈঠক হল।

বাতিল হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে পাঁচটি সরকারি এবং পাঁচটি বেসরকারি। সরকারি অঞ্চলগুলো হচ্ছে কঙবাজারের সোনাদিয়া ইকোট্যুরিজম পার্ক, বাগেরহাটের সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, গাজীপুরের শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হচ্ছে মুন্সিগঞ্জে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) গার্মেন্ট শিল্প পার্ক, সুনামগঞ্জে নিটলনিলয় গ্রুপের ছাতক ইকোনমিক জোন, বাগেরহাটের ফমকম ইকোনমিক জোন, ঢাকায় সিটি গ্রুপের সিটি ইকোনমিক জোন ও নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ে ইউনিক গ্রুপের সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল। খবর বিডিনিউজের।

বেজার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, আমিও আগে বলেছি যে ১০০টা ইকোনমিক জোনের দরকার নেই। বেজার অধীনে ১০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছি। কারণ, আমরা মনে করছি এগুলো প্রয়োজনীয় না। যেগুলো আছে এগুলোকে ঠিকভাবে করতে হবে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নেওয়া হয়। এ কাজে যুক্ত বেজা। গত বছর ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার এ মিশন থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানায়। ৭ জানুয়ারি বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক জানান সরকার ‘অগ্রাধিকার’ ভিত্তিতে কেবল পাঁচটি অঞ্চল নিয়ে কাজ করবে। বর্তমান বাস্তবতায় এখনই ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ‘প্রয়োজন নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, আগামী দশ বছরে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা গেলেই সেটি ‘যথেষ্ট’ হবে বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল রোববার বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতে যখন ইকনমিক জোন ঠিক করা হবে সেক্ষেত্রে জ্বালানি, পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে যুক্ত রেখে করতে হবে। যাতে গ্যাস ও পরিবেশের ক্ষেত্রে পূর্ণ নিশ্চয়তা নিয়ে কাজ শুরু করা যায়। ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে লম্বা আলোচনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটা ম্যানুয়াল। যেখানে ডিজিটাল সার্ভিস আছে সেখানে আগামী এক মাসের মধ্যে ম্যানুয়াল সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একজন বিনিয়োগকারীকে একটা নির্দিষ্ট পোর্টালে যেতে হবে। অন্য যেসব সেবা থাকবে সেটা ব্যাকএন্ডে সরকার ম্যানেজ করবে। সেজন্য একটা সফটওয়ার ডেভেলপ করতে হবে। কারণ এতগুলো প্ল্যাটফর্ম বিনিয়োগকারীর জন্য পেইনফুল।

বেজা ও বিডার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক অনেক দিন ধরে হচ্ছিল না তুলে ধরে চৌধুরী আশিক বলেন, ২০২০ সালে বেজা ও বিডার গভর্নিং বোর্ডের মিটিং হয়েছিল। পিপিপি (পাবলিকপ্রাইভেট পার্টনারশিপ) অথরিটির গভর্নিং বডির মিটিং হয়েছিল ২০১৯ সালে। বেপজার মিটিং হয়েছিল ২০১৮ সালে। প্রতিটি মিটিং ৫/৬ বছর পরে হচ্ছে। এটা ঠিক না। কম পক্ষে তিন মাস পর পর গভর্নিং বডির মিটিং হওয়া উচিত। আগামী মাসেও গভর্নিং বডির মিটিং হবে।

বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে ১৯টি ইকোনমিক জোনে কাজ চলছে। ১২২টি কোম্পানি নির্মাণ ও উৎপাদন পর্যায়ে আছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৭ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে এবং ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছে ২১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

বেজার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আরও সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা বে টার্মিনাল নিয়ে অনেক দিন ধরে কথা বলছি সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে। সেপ্টেম্বরঅক্টোবরের মধ্যে বে টার্মিনালের ইস্যুটা রিজলভ করে একটা সিগনিফিকেন্ট মাইলস্টেন ক্রস করবো। বে টার্মিনাল একটা পর্যায়ে নিয়ে আসবো। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে একটা ফ্রি ট্রেড জোন করবো। বোর্ডের আলোচনা জুড়ে বিমান বন্দর ও সমুদ্র বন্দরকে আরও বেশি সক্রিয় করার বিষয়টি ছিল বলে তুলে ধরেন বিডা চেয়ারম্যান।

প্রাবাসীদের মধ্যস্ততায় আসা বিদেশি বিনিয়োগে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এফডিআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) এর ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া যায় কিনা সেটা নিয়েও আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠালে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে থাকি। একজন প্রবাসী বাংলাদেশি যদি বিদেশ থেকে বিনিয়োগ নিয়ে আসে সেক্ষেত্রেও প্রণোদনার ব্যবস্থা করার চিন্তা করা হচ্ছে।

ভারত যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করেছে সেটিও এদিন বেজার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তুলে ধরেন বিডা চেয়ারম্যান। ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করায় তা দেশি সক্ষমতা বাড়ার সুযোগ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি। চৌধুরী আশিক বলেন, ভারত যে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করেছে আমরা এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখছি। এমন নয় যে বিষয়টি আমাদের লাভ হয়েছে। ঢাকার একটা কারখানার পণ্য সড়ক পথে দিল্লি বা কলকাতায় গিয়ে ফ্লাইট ধরে আরেক দেশে যেতো। এখন আমাদের বিমানবন্দরগুলো আরও একটিভ করা হবে। যাতে আগের চেয়ে কম খরচে বিদেশে পণ্য পাঠানোর সুযোগ হয়। কারণ, এখন তো আমাদের আর কোনো উপায় নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসি হিলে বর্ষবরণের মঞ্চ ভাঙচুর, অনুষ্ঠান বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধলিটারে ১৪ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম