সৈকতে ১২৫টি ডিম পাড়লো জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | বৃহস্পতিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের সোনারপাড়া সৈকতে ১২৫টি ডিম পেড়েছে ‘অ্যারিবদা’ বা একই সময়ে দলে দলে ডিম পাড়তে আসার জন্য বিখ্যাত ‘অলিভ রিডলি’ বা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কাছিম। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে একটি মা কাছিম সমুদ্র থেকে এসে উখিয়ার রেজু নদী সংলগ্ন উত্তর সোনারপাড়া সৈকতে ডিম পাড়ে এবং কয়েক ঘন্টা পর ফের সমুদ্রে চলে যায়। গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ডিমগুলো সংগ্রহ করে একই সৈকতে স্থাপিত হ্যাচারিতে স্থানান্তর করেছেন।

এনিয়ে চলতি মৌসুমে সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারটেকনাফ সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ২১টি ‘অলিভ রিডলি’ ডিম পেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিপিউটের বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে এবারই প্রথম সোনারপাড়া সৈকতে ডিম পাড়তে আসে অলিভ রিডলি কাছিম। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই সৈকতে গত মৌসুমে প্রথম ডিম পাড়ে মার্চ মাসের শেধার্ধে।

তিনি জানান, গতবছর ২১ মার্চ সোনারপাড়া সৈকতে তিনটি কাছিম ডিম পাড়ে। এরমধ্যে দুটি কাছিমের ডিম একদল লোক চুরি করে বিক্রি করে দেয়। খবর পেয়ে বোরির বিজ্ঞানীরা একটি কাছিমের ডিম স্বস্থান পদ্ধতি বা যেখানে ডিম পেড়েছে সেখানেই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, যেখানে ছিল ৯০টি ডিম ছিল। পরে মে মাসে সেখান থেকে ৮৪টি বাচ্চা ফোটে। এরপর সেই বাচ্চাগুলো সাগরে অবমুক্ত করে দেয়া হয়। এনিয়ে চলতি মৌসুমে কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে ২১টি ‘অলিভ রিডলি’ কাছিম ডিম পেড়ে নিরাপদে সাগরে চলে গেছে। আর ১০টি কাছিম মৃত অবস্থায় সৈকতে পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। কাছিম সংরক্ষণের দায়িত্বরত বেসরকারী সংস্থা নেচার কনজোর্ভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর ইকোলাইফ প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক জৈব সমুদ্র্রবিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ূম জানান, কক্সবাজারের ‘ভার্জিন আইল্যান্ড’ বা অনাঘ্রাত দ্বীপ খ্যাত সোনাদিয়া দ্বীপটি সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্য বিখ্যাত। এ দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিম পাড়া, বদরখালীপাড়া, মগচর ও বেলেকের দিয়া, এই ৫টি পয়েন্টে ডিম পাড়ে কচ্ছপেরা। চলতি মৌসুমে সোনাদিয়া দ্বীপে প্রথম সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসে গত ৩১ ডিসেম্বর। সোনাদিয়ায় এখনও পর্যন্ত ৫টি কাছিম ডিম পেড়েছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে অলিভ রিডলি কাছিম প্রথম ডিম পাড়তে আসে সেন্টমার্টিনে, গত অক্টোবরের শেষার্ধে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র চারটি কাছিম ডিম পেড়েছে। এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ৭টি, শিলখালীতে ২টি এবং মাদারবুনিয়ায় একটি কাছিম ডিম পাড়ে। আর রামুর পেঁচারদ্বীপ সৈকত ও উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকত পয়েন্টে চলতি মৌসুমে এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি করে কাছিম ডিম পেড়েছে।

একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত সীটার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ। এটি পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ বা ‘কীস্টোন প্রজাতি’ হিসাবেও বিবেচিত। পরিবেশে এই ধরনের প্রজাতির বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে আরো বহু প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব। কাছিমকে ‘সামুদ্রিক ঝাড়ুদার’ও বলা হয়। এরা সমুদ্রের পঁচাগলা বস্তু খেয়ে দূষণ পরিস্কার করে।

সারা বিশ্বের সাগরে প্রায় সাত প্রজাতির সীটার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ সাতাঁর কেটে বেড়ায়। তবে আমাদের বঙ্গোপসাগরে দেখা যায় তিন থেকে পাঁচ প্রজাতির। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অলিভ টার্টল বা জলপাই রঙা কাছিম। এছাড়া গ্রিন টার্টল বা সবুজ রঙা কাছিম ও হক্সবিল বা ভুত কাছিমও কক্সবাজার সৈকতে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। এরমধ্যে রিডলি জাতের স্ত্রী কচ্ছপেরা হাজার মাইল অতিক্রম করে প্রতি বছর একই সময়ে ও স্থানে দলে দলে এসে বাসা বাঁধে এবং সৈকতে ডিম পাড়ে, এরপর সাগরে চলে যায়। রিডলি সামুদ্রিক কাছিমের এই অনন্য আচরণ সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে এক আশ্চর্যতম ঘটনা। এই ঘটনাটি রিডলি কাছিমের ‘অ্যারিবদা’ হিসাবে পরিচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএমপি ও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শীতবস্ত্র বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধচোরাই স্বর্ণালংকারসহ গ্রেপ্তার ৩