সেদিন সুদূর নয় : বিশ্ব দেখবে নতুন নেতৃত্ব, স্বপ্ন বাস্তবায়নের চিত্র

নেছার আহমদ | মঙ্গলবার , ২২ জুন, ২০২১ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৩ তম। যা বিশ্বের মোট আয়তনের দশমিক এক শতাংশের কম। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে ৪১ তম।
জন্মলগ্ন থেকেই ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ির’ দেশটি বর্তমান বিশ্বের কাছে এক ‘বিস্ময়কর উন্নয়নের রোল মডেল’। বিস্ময়কর ধারাবাহিক এ উন্নয়নের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন, রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রিলিফ নিয়ে যে জাতির যাত্রার শুরু সে জাতি এখন অন্যকে সঙ্কটের সময় রিলিফ দিতে পারে। ঋণ গ্রহীতার তালিকা থেকে বাংলাদেশ এখন উঠে এসেছে ঋণদাতা দেশের তালিকায়। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা যা বর্তমানে (২০২১-২২) এ ছয় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। করোনার কারণে যেখানে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ভিত নড়ে বড়ে সেখানে যথাযথ সময়োপোযোগী পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার এ অঞ্চলে সর্ব্বোচ্চ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃতির দেশে পরিণত হয়েছে।
পরিবর্তনশীল বিশ্বে সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছয় বছর আগে ঠেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) স্থির করার পর যে তিনটি দেশ তাদের আগের অবস্থা থেকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করছে তার মধ্যে শীর্ষ স্থানে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। যা ২০২৬ এ শেষ হবে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দ্বিতীয় এক্সপ্রেসের মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে, ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিজয় সহজ হয়েছে। বছরে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব। রেমিটেন্স প্রবাহ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের দৃষ্টিতে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নের মানদন্ডে বাংলাদেশের অবস্থান অতি উজ্জ্বল।’ তিনি আরো বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত পিছিয়ে’। একটি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে একটি মহৎ উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত করতে পারা শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু মানুষের পক্ষেই সম্ভব। নেতৃত্ব এমন একটি গুণ যা সবার মাঝে থাকেনা। এবিষয়ে জন সি ম্যাক্স ওয়েন বলেছেন,‘এ লিডার ইস ওয়ান হু নোজ দা ওয়ে, গোজ দা ওয়ে এন্ড গোজ দা ওয়ে’। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, বিশ্বের প্রত্যেকটি সফল জাতির অভ্যুদয়ের নেপথ্যে রয়েছে কোন না কোন মহামানবের নেতৃত্ব। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনই একজন মহান নেতা যার জ্যোতির্ময় আবির্ভাব হয়েছিল বলেই বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। তারই দেখানো পথ অনুসরণ করে তারই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশকে উন্নত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিরাম কাজ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর ও সফল নেতাদের অন্যতম। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তারই বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই। বিশ্বের অনেক মহান নেতা তাঁদের কালজয়ী উক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিকে উৎসাহিত করেছেন যা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অপূর্ব স্থাপত্যশিল্প ও দৃষ্টিনন্দন ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এক সঙ্গে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বে প্রথম কোন সরকার একই সময়ে এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা যা বিশ্বে বিরল। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। নান্দনিক নির্মাণ শৈলীতে নির্মিত এসব মডেল মসজিদে রয়েছে একটি করে দৃষ্টিনন্দন মিনার। মূল মসজিদটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। তিনি তাঁর বক্তৃতায় ধর্মের নামে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদকে প্রতিহত এবং এই সর্বনাশা পথে যেন দেশের যুব সমাজ জড়িয়ে যা পড়ে সেজন্য দেশের আলেম ওলামা, ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, “মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ তৈরি করে মানুষ খুন করে, বোমা মেরে, খুন খারাপি করে আমাদের পবিত্র ধর্মের নামে বদনাম সৃষ্টি করছে, যেটা আমাদের ধর্মের পবিত্রতাকে কেবল নষ্ট করছে না এর ইমেজটাও নষ্ট হচ্ছে সারা বিশ্বে। জঙ্গীবাদ বা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যারা জড়িত এই পথ সর্বনাশার পথ এই পথ থেকে আমাদের যুব সমাজ যেন দূরে থাকে। আমাদের সকলকে সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে কমিটি করে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের পাশাপাশি মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাশবিকতার বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই মসজিদগুলোও আমরা সেভাবে তৈরী করতে চেয়েছি। যেখানে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যেন আরও বৃদ্ধি পায়”। দেশ রাষ্ট্র ও সমাজ আমরা যখনই প্রতিকুল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তখনই আমাদের প্রধানমন্ত্রী এভাবেই তাঁর দিক নির্দেশনার মাধ্যমে আমাদেরকে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সহায়তা করেছেন। তাঁর নিরলস পরিশ্রমের ফলেই আমরা উন্নত দেশের মতো যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি। চলমান বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আমাদের জীবন যাত্রা আরও সহজ এবং উন্নত হবে। দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসার সম্পূর্ণ কৃতিত্বই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তাঁর একক ও সাহসী প্রচেষ্টায় আমরা সকল বিপত্তি অতিক্রম করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপশক্তি কখনও মৌলবাদের বিষবাষ্প কখনও স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল অপশক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করে দেশ পরিচালনা করছেন।
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় ও বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই সকল প্রকার বাধা বিপত্তি দুর্যোগ দুর্বিপাক, সকল প্রকার ষড়যন্ত্রকে জয় করে কোভিড-১৯ বা করোনার আপদকালীন সম্পর্ক মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যে দিন বঙ্গবন্ধুর ন্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যেই মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সে সময় সকল উন্নয়ন জনসম্মুখে দৃষ্টিগোচর হলেই দেখা যাবে নতুন এক বাংলাদেশকে। বিশ্ব দেখবে নতুন এক নেতৃত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাস্তব চিত্র। আমরা সে সময়ের অপেক্ষায় যখন সমগ্র বিশ্বনেতারা বলবেন, ‘ইতিহাসের এক বিরল নেতৃত্বের নাম শেখ হাসিনা’।
লেখক : প্রাবন্ধিক; সম্পাদক-শিল্পশৈলী

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোবটিক্সের ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে
পরবর্তী নিবন্ধ১৯৮৬ সনের আইনে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন হবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক