সেই ‘খোকা’ আজ বাংলাদেশের রূপকার

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী (বাবু) | শুক্রবার , ১৮ মার্চ, ২০২২ at ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়া গাঁেয় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া ছোট্ট এক শিশু। বাঙালির অধিকার ও ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল সেই শিশুটি। কোনো ধরনের ভীতি, সংশয়, দ্বিধা যাকে গতিরোধ করতে পারেনি, সেই শিশুটির ছোট বেলায় পিতা লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন আদর করে নাম রেখেছিলেন ‘খোকা’। পরিবারের সবাই খোকা বলে ডাকত। খোকাটির ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবেনা। তিনি শুধু এ দেশের নন, সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের মধ্যে একজন।
কালক্রমে শিশুটি হয়ে উঠেন বিশ্ব নন্দিত নেতা। পাড়া প্রতিবেশীরা কখনও ‘খোকা’ আবার ‘মিয়া ভাই’ কখনও সহপাঠী বন্ধুরা ‘মুজিব ভাই’ বলেও সম্বোধন করে ডাকত। তিনি ছোট বেলায় পাখি ভালোবাসতেন। পুকুরে সাঁতার কাটা, এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফ দেয়া এগুলো ছিল খোকার নিত্যদিনের কাজ। ছেলেবেলা থেকেই খোকা ছিলেন সাহসী,প্রতিবাদী, গরীব দুঃখী মানুষের প্রতি সহনশীল। ব্যক্তি জীবনে খোকা ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে ও সরল প্রকৃতির। জনগনের মুখে হাসি ফুটানোই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। সেই খোকাটিই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় ১০ লাখ জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তাঁর এই ভাষণে পুরো বাঙালি জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদগ্রীব হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পশ্চিমা শাসকের বিরুদ্ধে। তিনি এই ভাষণে জাতিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই শিশুটি খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে তার অদম্য নেতৃত্ব আর ত্যাগ কার্যকরী ভুমিকা পালন করেছিল। বাংলার মানুষ, আকাশ, বাতাস, প্রকৃতি সব জায়গাতেই তিনি অমর হয়ে আছেন।
এই স্বাধীন বাংলার বীজ বপনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিল সেই খোকাটি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন যা ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ হিসেবে খ্যাত, ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবরণ, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান সহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
সেই খোকাটি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আর কেউ নন, বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি এই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তাই টুঙ্গিপাড়ার সেই খোকাকে কোনো দলীয় মোড়কে আবদ্ধ না রেখে বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসীর কাছে যথাযথ সম্মান ও সূর্যের আলোর মত উদ্ভাসিত হয়ে থাকুক অনন্তকাল ধরে। চির অম্লান থাকুক এই মহানায়কের নাম বাংলার প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাজার মনিটরিং জোরদার করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিশ্রুতি