সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে পারে

| শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত, পুনর্ব্যবহার ও নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এ ব্যবস্থাগুলো আছে বটে, তবে তা অত্যন্ত দুর্বল ও সেকেলে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব অবকাঠামোয় বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্জ্য পদার্থ রাস্তার পাশে এখানে-সেখানে স্তূপ করে রাখা হয় এবং তা পচে বাতাস মারাত্মক দূষিত করছে।
আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে একটি নগরের সৌন্দর্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। যে নগরে এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি সেই নগরের পরিচ্ছন্নতা মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় সহজে। তখন তা অনেকাংশে নির্ভর করে বিদ্যমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতার ওপর। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, আমাদের দেশের নগরগুলোর ময়লা-আবর্জনা অপসারণ গতানুগতিক পদ্ধতি ও গতিতে এখনও দৃশ্যমান বলে পরিবর্তন আসে নি কোথাও। দেখা যাচ্ছে, কোথাও কোথাও রাজপথের কিছু অংশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই যানবাহন ও পথচারী চলাচলে তাতে অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং আবর্জনার দুর্গন্ধে পথচারীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়। আবার বাসাবাড়ির আশপাশ, রাস্তা-বাজার, জনসমাগম স্থল, ডোবা, বিভিন্ন স্থাপনার আড়াল-আবডালকে ময়লা ফেলার উৎকৃষ্ট জায়গা হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে। দোকানিরা রাতে দোকান বন্ধ করার সময় যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলে রাখে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কোনো কোনো কাঁচাবাজারের অবস্থা আরও করুণ। কাদা-পানি, ময়লা-আবর্জনায় সেখানে যাওয়া-আসাই কঠিন হয়ে পড়ে। যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা কফ-থুতু, পান-বিড়ির উচ্ছিষ্টাংশ, ফলমূলের খোসা, কাগজ, পানির বোতল, নির্মাণসামগ্রীর ময়লা-আবর্জনায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এহেন পরিস্থিতিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘আধুনিক হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের আশান্বিত করেছে। এতে বলা হয়েছে, নগরে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে থাকবে না খোলা ডাস্টবিন ও উন্মুক্ত ড্রেন-নালা। একইসঙ্গে নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলার প্রবণতাও বন্ধ হবে। পাশাপাশি বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্যের একটি অংশ ডাম্পিং করার আগেই উৎপাদনশীল খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ডাম্পিংয়ের পর রিসাইক্লিং করে বাকি বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে নগরের ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের নবীনগরে। এজন্য ওই এলাকার ৮০০ বাড়ির ৩০০ পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত প্রতিটি বাড়ির সামনে একটি করে ঢাকনাযুক্ত বিন দেয়া হবে। কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে ওই বিন থেকে বাড়ির মালিকদের ফেলা গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন। তবে ডাস্টবিনে থাকবে পলিথিন। অর্থাৎ পলিথিনে মুড়িয়ে বর্জ্যগুলো নিয়ে যাওয়া হবে। এতে ডাস্টবিনটিও অপরিচ্ছন্ন হবে না। এছাড়া প্রতি দুই বাড়ি পর পর একটি করে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা হবে। আগামী ১ অক্টোবর প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে নাজুক করছে এবং এলাকার সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্থায়ী-অস্থায়ী, ছোট-বড় যে কোনো ইন্সটলেশনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিবেচনায় রাখতে হবে সেটি শহরের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে কি না, জনমানুষের অসুবিধা হচ্ছে কি না, পরিবেশের ক্ষতি বা অন্য কোনো জনউপদ্রব তৈরি করছে কি না। আমাদের শহরগুলোতে এগুলোর কোনো কিছুই বিবেচনায় নেয়া হয় না। তাঁরা বলেন, রাস্তায় রাস্তায় ময়লা ফেলার লোহার বড় বড় কনটেইনার শহরের সৌন্দর্যহানিসহ মানুষ ও পরিবেশের বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি করছে। কয়েক বছর আগে স্থাপিত শহরময় ফুটপাতের লোহার তৈরি ঝুলন্ত মিনি ওয়েস্টবিনগুলো শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে কোনো ভূমিকা রাখছে কি না এটিও নতুন করে খতিয়ে দেখতে হবে।
আশার কথা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে নগরবাসী এর সুফল পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বর্জ্যও সম্পদ। পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা তা প্রমাণ করতে চাই। আসলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা ও জনগণের অংশগ্রহণ। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এ বর্জ্যকে পরিণত করতে পারে সম্পদে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে