সুন্দর সমাজ ও প্রজন্ম গড়ে তুলতে সম্মিলিত চেষ্টা প্রয়োজন

মৃন্ময়ী মৃম | বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষকদের হাতে বেত কি আদৌ শিশুর সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ঘটাবে, নাকি শারীরিক শাস্তির ভয় দেখিয়ে শুধু শিশুদের সাময়িক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করলে, মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণা দেখলেই পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষক কিংবা অভিভাবকদের বেত্রাঘাত অপমান সূচক গালি বাচ্চাদের সুকুমার মনোবৃত্তি নষ্ট করে দেয়। যে কোনো অত্যাচারীত মানুষ অত্যাচারী হয়। শিশুদের কোমল মন অত্যাচারী নয়তো ভীরু হয়ে ওঠে যদি তারা আদর ভালোবাসার পরিবর্তে ছোটবেলায় শারীরিক ও মানসিক শাস্তি পেয়ে বেড়ে ওঠে। কাজেই শিক্ষকদের হাতে বেত কোনো সমাধান নয় বর্তমানে পরিলক্ষিত সমস্যার। আমাদেরকে সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান খুঁজতে হবে। সমস্যার মূলে গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং শিক্ষানীতিমালা। এইসব পরিবর্তন করে শিশুদের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জিপিএ ফাইভের মধ্যে ছক বেঁধে ভালো ছাত্র-ছাত্রী তৈরি হয় না, ভালো মানুষ গড়ে ওঠে না। রেজাল্ট ভালো হওয়া আর ভালো চরিত্রের হওয়া এক নয় সেটা অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বুঝতে হবে। সমস্ত শিক্ষাই ব্যর্থ যদি শিশুদের চিন্তা, চেতনে, মননে, ভালো চরিত্র গঠনে অভিভাবক এবং শিক্ষকরা ব্যর্থ হোন। ছোটবেলা থেকে জিপিএ ফাইভ এর জন্য প্রতিযোগী না করে বাচ্চাদের ভালো চরিত্র গঠন করতে প্রতিযোগী করে তুলতে হবে। সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে । সুশিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে তার পর স্কুলে। পারিবারিক পরিবেশ ও শিক্ষা যদি সুস্থ ও সুন্দর না হয় সেই শিশু স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া শিখবে কিন্তু সুন্দর মানসিকতার হতে পারবে না। তেমনি শিক্ষক যদি অসম্মানজনক আচরণ করেন, শিশুদের অপমান সূচক কথা বলেন তাহলে শিশুদের কাছে কখনোই সেই শিক্ষক সম্মান পাবেন না। কিছুদিন যাবত ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে হবে আমাদের সকলকে। নয়তো একটা বিকলাঙ্গ অসুস্থ প্রজন্মের জন্য আমরাই দায়ী থাকবো। অভিভাবক এবং শিক্ষক প্রতিটি শিশুর কথা ধৈর্য সহকারে শুনুন। ওদের বলতে দিন। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেবেন না। ভুল করলে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন সঠিক কী। অসম্মানজনক কোনো শব্দ বলে, শারীরিক আঘাত করে শিশুদের শাসন করবেন না। এতে শিশুরা ভয় পেয়ে পরবর্তীতে কিছু আর বলবে না। তখনই তৈরি হবে দূরত্ব। আপনি জানবেনই না আপনার বাচ্চাটি কীভাবে বেড়ে উঠছে। পাশের ভালো ছাত্রটির সাথে তার তুলনা করে তাকে হেয় করার চেষ্টা করবেন না। বরং উৎসাহ দিয়ে বলুন সেও চেষ্টা করলে ভালো করতে পারবে। তার গুণগুলো প্রশংসা করুন। প্রতিটি শিশু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কোন শিশুর ঝোঁক কোন বিষয়ে তা ছোটবেলা থেকেই খেয়াল করুন এবং বড় হয়ে তাকে সেই বিষয়ে পারদর্শী হতে সাহায্য করুন। যে বাচ্চা সায়েন্স ভালো বাসে না থাকে জোর করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর চেষ্টা বাদ দিন। সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেই নিজেকে একমাত্র সফল পিতা-মাতা ভাবার ভাবনা আপনাকে বাদ দিতে হবে। আপনার এই ভাবনা সন্তানের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। মনে রাখবেন মেধার বিকাশ সবার একভাবে এক বিষয়ে হয় না। আপনি নিজেকে দিয়ে ভাবুন আশপাশের দশজনের চেয়ে আপনি কত আলাদা। আপনি চাইলেও অনেকের মত হতে পারবেন না। সেখানে নিজের বাচ্চাটাকে কীভাবে চাইছেন আপনার পছন্দের অন্য একটা বাচ্চার মত হোক। সমাজে অবক্ষয় একজনের দ্বারা হয় না, একদিনেও আসে না। আমরা অবক্ষয় দেখি কিন্তু নিজে কতটুকু দায়ী তা কখনো ভাবি না। এখন সময় এসেছে ভাবার। চলুন সম্মিলিত চেষ্টায় যে যার অবস্থান থেকে একটা সুস্থ, সুন্দর সমাজ ও প্রজন্ম গড়ে তুলতে চেষ্টা করি আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিশোর অপরাধ নৈতিকতার অবক্ষয়
পরবর্তী নিবন্ধভূলুণ্ঠিত শিক্ষকের মর্যাদা