সুকান্ত ভট্টাচার্য: রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক কবি

| শুক্রবার , ১৩ মে, ২০২২ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

সুকান্ত ভট্টাচার্য। বাংলাসাহিত্যের প্রগতিশীল চেতনার কিশোর কবি। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাঁদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাঁদের অন্যতম। তিনি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়ায়। পিতা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য কলকাতায় পুস্তক ব্যবসা করতেন। সুকান্তের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কলকাতার কমলা বিদ্যামন্দিরে; পরে তিনি বেলেঘাটা দেশবন্ধু হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মনন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন।

১৯৪৪ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়ে’ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দিনকতক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তার লেখা বিবেকান্দের জীবনী। মাত্র এগার বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতি নাট্য রচনা করেন। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতা-র (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন।

সুকান্তের সাহিত্য-সাধনার মূল ক্ষেত্র ছিল কবিতা। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্তু। তাঁর রচনাকর্মে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতার বৈপ্লবিক ভাবধারাটি যাঁদের সৃষ্টিশীল রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, সুকান্ত তাঁদের অন্যতম।

তাঁর কবিতার ছন্দ, ভাষা, রচনাশৈলী এত স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত যে, তাঁর ব য়সের বিবেচনায় এরূপ রচনা বিস্ময়কর ও অসাধারণ বলে মনে হয়। তাঁর রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলী প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসংঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। ১৯৪৭ সালের ১৩ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবাস মালিকেরা ‘বেপরোয়া’, প্রতিকার চাই