দুই পাশে ফুলের রাজ্য। মাঝখানে বিশালাকার পুকুর। তাতে চলছে কায়াকিং। সন্ধ্যায় চালানো হয় পানির ফোয়ারা। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলি, চেরিসহ দেশি–বিদেশি ফুলের সুবাসে ম ম করছে চারপাশ। মাঠজুড়ে নানা নকশায় লাগানো হয়েছে ফুলগাছ। দর্শনার্থীরা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করেছেন এখানে। এ যেন অন্যরকম এক পরিবেশ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘ফুলের মতো আপনি ফোটাও গান’ প্রতিপাদ্যে গত ৪ জানুয়ারি থেকে ফৌজদারহাটে দক্ষিণ পার্শ্বে ডিসি পার্কে তৃতীয়বারের মতো মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ফুল উৎসব।
পার্কে ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার বাসিন্দা সেকান্দর হোসাইন বলেন, আগেও তিনি এখানে এসেছেন। তবে তখন আর এখন অনেক পার্থক্য। পুরো পার্কটা তার কাছে অসাধারণ লাগছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকা থেকে বেড়াতে আসা আবদুস সালাম বলেন, কয়েকজন বন্ধু মিলে ডিসি পার্কে ঘুরতে এসেছেন। পার্কটি কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দুই কন্যা শিশু ও স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে এসেছেন চট্টগ্রাম নগরীর ব্যবসায়ী আশিক মোহাম্মদ। তিনি বলেন, উদ্বোধনের ২য় দিন তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডিসি পার্কে এসেছিলেন। মানুষ বেশি থাকায় সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তিনি পার্কে প্রবেশ করতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার সবাইকে নিয়ে পার্কে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। শুক্রবার তিনি আবারও একা আসেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে এই এলাকাটি ছিল অবৈধ দখলদারের হাতে। চলতো অবৈধ মাটি উত্তোলন, অসামাজিক কার্যকলাপ। সন্ধ্যা হতেই এলাকাটি হয়ে উঠত ভয়ংকর। মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবীদের আড্ডা ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য ছিল এটি। দুই বছর আগে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন সেই মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে এই ১৯৪ একর খাসজমি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এখানে প্রতিষ্ঠা করে দেশি–বিদেশি ফুলের সমারোহে ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক।
দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। পার্কের বাইরে সড়কে উভয় দিকে অন্তত দুই কিলোমিটার পর্যন্ত প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। টিকিট কাউন্টার থেকে পার্কের ভেতরে সব অংশেই ছিল ভিড়। পুকুরে কায়াকিংয়ের জন্যও ছিল উৎসুক মানুষের দীর্ঘ সারি। পার্কে খাবারের স্টল, নৌকা, চিত্রকর্মের প্রদর্শনী সবখানে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
পার্কটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন বলেন, ছুটির দিনগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দর্শনার্থীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেলেও মানুষকে কিভাবে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া যায়, সে বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ফুল পবিত্রতার প্রতীক, সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুল মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়, মানুষের মনে নির্মল আনন্দ নিয়ে আসে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুল উৎসব। চট্টগ্রামে ৩য় বারের মতো এ আয়োজন হচ্ছে। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ–গাঁদা প্রভৃতি দেশি–বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির ফুলের পসরা বসেছে এ মেলায়। ফুলের সৌরভে চারদিক মাতোয়ারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ফুলের সমারোহে ডিসি পার্ককে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি প্রজাতি ভিন্ন রঙ, আকৃতি এবং ঘ্রাণে সমৃদ্ধ যা সহজেই দর্শকদের মনকে আলোড়িত করছে।