আট মাসের মধ্যে দুটি ভয়াবহ দুই বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানির পর সীতাকুণ্ডে কারখানাগুলোতে তদারিকের হাল নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, তখন দেখা গেল সেখানে কতটি কল–কারখানা রয়েছে, সেই তথ্য নেই সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া চট্টগ্রাম বন্দরের নিকটবর্তী উপজেলা সীতাকুণ্ডে অনেকগুলো কল–কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজ ভাঙার কারখানা, যেখানে অনিরাপদ পরিবেশে কাজ চলার অভিযোগ বহু পুরনো।
গত বছরের জুন মাসে সেখানে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে অর্ধশত জন নিহত হন। গত ৪ মার্চ সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ঘটে বিস্ফোরণ, তাতে নিহত হন সাতজন। সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণের পর ভারী ও মাঝারি শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের আলোচনা আবার সামনে এসেছে। তবে সংস্থাগুলোর কাছে যখন শিল্প–কারখানার সঠিক সংখ্যাই নেই, তাহলে তদারকি আর কী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান শ্রমিক নেতারা। খবর বিডিনিউজের।
দেখা যায়, সরকারি একাধিক সংস্থা এসব কারখানা তদারকির দায়িত্ব থাকলেও তারা পরিদর্শন ও চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা তা আর খতিয়ে দেখেননি। আর এত কারখানা তদারকিতে অসমর্থ্য বলে জানাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল চট্টগ্রাম জেলার ভারী ও মাঝারি শিল্পপ্রবণ এলাকার দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই চিত্র উঠে আসে।
সংখ্যা কত : সীতাকুণ্ড এলাকার ভারী ও মাঝারি শিল্প–কারখানার সংখ্যা কত তা সভায় জানতে চান জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। কল–কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ–মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত তখন জানান, সীতাকুণ্ডে ৫৭৫টি কারখানার নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান চালু করেনি। নিবন্ধনের বাইরে কতগুলো আছে, তা তার জানা নেই। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরো চট্টগ্রাম জেলায় নিবন্ধন নিয়েছে ৪৯৪৮টি কল–কারখানা। চালু আছে ২০৩২টি।
সীতাকুণ্ডে কারখানার সংখ্যা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক সভায় বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের তথ্য আছে। সেটা কত এখনই বলতে পারছি না। তথ্য নিয়ে পরে জানাতে পারব।
একই বিষয়ে সীতাকুণ্ডের ইউএনও শাহাদাত হোসেন বলেন, তহশিলদারদের মাধ্যমে আমরা একটা জরিপ করেছিলাম। সীতাকুণ্ডে ১৭৯টি শিপ ইয়ার্ডসহ ৪৮০টি ছোট–বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ৫৪টিতে গত বছর আমরা পরিদর্শন করেছি। কিছু নির্দেশনা দিয়ে আসি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এতগুলো প্রতিষ্ঠান তদারকি সম্ভবপর নয় বলে জানান তিনি।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান বলেন, আমরা শুনেছি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। ভারী ও মাঝারি শিল্প কত আছে? রিস্ক ফ্যাক্টর কী। সেগুলো সার্ভে করেন। শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত না করে যেন নতুন কারখানা চালু না হয়। আর চালু কারখানাগুলোকে কীভাবে কমপ্লায়েন্সে আনা যায়, সেটার ক্রাশ প্রোগ্রাম করব।
সাগর ও পাহাড়বেষ্টিত সীতাকুণ্ড উপজেলায় শিপইয়ার্ড, কন্টেনার ডিপো, অঙিজেন প্ল্যান্ট, স্টিল রি রোলিং মিল, তেল ডিপো, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, পুরনো জাহাজের তেল–টায়ার–বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মজুদ ও কাটার প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্প আছে।
সভায় তিন ক্যাটাগরিতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ (লাল), মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ (হলুদ) ও কম ঝুঁকির (সবুজ) শিল্প–কারখানার তালিকা করতে ফায়ার সার্ভিস, কল–কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।