সিএনজি ট্যাক্সি মালিকদের বাড়তি জমা আদায়

শ্রমিকের মধ্যে অসন্তোষ, প্রতিবাদ করলে চালক ছাঁটাই বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

আইন না মেনে নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সিতে নৈরাজ্য চলছে। চালকদের অভিযোগ, মালিকরা সরকারের আইন মানে না। সরকার দৈনিক জমার হার বেঁধে দিয়েছে ৯০০ টাকা। অথচ মালিককে দিতে হচ্ছে ৯৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। প্রতিবাদ করলে চালককে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এই ভয়ে তারা মালিকের দাবি মেনে নিতে গিয়ে যাত্রী সাধারণের থেকে বেশি টাকা আদায় করছে। এমন নৈরাজ্যে যাত্রীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে।
চট্টগ্রামে সিএনজি ট্যাক্সির অতিরিক্ত জমা আদায় প্রত্যাহারের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন শতাধিক চালক। গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে নগরীর বাদুরতলা বড় গ্যারেজ এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ আন্দোলন ধীরে ধীরে নগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকারি গেজেট অমান্য করে সিএনজি ট্যাক্সির মালিকরা বাড়তি জমা আদায় করছেন। নিয়ম অনুযায়ী দৈনিক ৯০০ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও গাড়ির মালিকরা নিচ্ছেন ৯৭০ টাকা থেকে ৯৮০ টাকা, কখনো ১০০০ টাকা পর্যন্ত। তিনি বলেন, একসময় জমা ছিল ৬০০ টাকা। সেটাকে এক লাফে বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৯০০ টাকায়। এ ব্যাপারে আমরা গত জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তাতে বলেছিলাম, যুক্তিসঙ্গত হারে যেন মালিকের জমা করা হয়। কিন্তু এক টাকাও কমানো হয় নি। এখন সরকারি গেজেটে ৯০০ টাকা জমা ধার্য করা হলেও মালিকপক্ষ তা না মেনে জমা নিজের মর্জি মাফিক বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৯০০ টাকার সাথে দিতে হয় গ্যারেজ ভাড়া আরো ৫০ থেকে ১০০ টাকা। অথচ সেই টাকা মালিকের দেওয়ার কথা। আমরা এবার আর ছাড় দেবো না মালিকপক্ষকে। অতিরিক্ত জমা আদায় প্রত্যাহারের বিষয়ে মালিকদের পক্ষ থেকে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানান তিনি।
ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে মেট্রো আরটিসির চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিএনজি ট্যাঙি চালকগণ। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন, শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার সড়কগুলোতে চলাচলকারী সিএনজি ট্যাঙি চালকদের প্রতিনিধিত্বকারী সর্ববৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। বাংলাদেশ শ্রম আইন, শ্রম বিধিমালা ও ইউনিয়ন গঠনতন্ত্রের বিধি-বিধান অনুসারে ইউনিয়নটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ১৬ হাজারের বেশি।
সরকার ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেটে সিএনজি / পেট্রোল চালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ এর ‘অনুচ্ছেদ – ঘঃ সিএনজি / পেট্রোলচালিত ৪ – স্ট্রোক থ্রি – হুইলারের ভাড়ার হার’ সংশোধন করে মালিকের দৈনিক জমা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকায় পুন:নির্ধারণ করেছে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ সংশোধন ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরীর সিএনজি ট্যাঙি মালিকগণ এসব গাড়ির চালকদের থেকে সরকার নির্ধারিত মালিকের দৈনিক জমা ৯০০ টাকার পরিবর্তে ১,০০০ টাকা, কোথাও কোথাও আরও বেশি আদায় করছে। যা ‘সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮’ ধারা : ৩৫ এর সুস্পষ্ট লংঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সিএনজি ট্যাঙি চালকদের আয় অর্ধ্বেকের নিচে নেমে এসেছে। সেই সাথে বর্তমান সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের যে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাতে জিনিসপত্রের দাম স্মরণাতীতকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ফলে এসব চালককে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আজ অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় যেখানে সরকার নির্ধারিত মালিকের দৈনিক জমা ৯০০ টাকা উপার্জন করতে সিএনজি ট্যাঙি চালকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং, সদরঘাট, কোতোয়ালী, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, চকবাজার, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকাসহ মহানগরীর প্রায় সকল এলাকার মালিকগণ এসব গাড়ির দৈনিক জমা বৃদ্ধি করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর অটোরিঙা-অটোটেম্পো সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিটু মহাজন আজাদীকে বলেন, আমাদের সমিতির কোনো মালিক সরকার নির্ধারিত জমা ৯০০ টাকার বেশি নিচ্ছেন না। এটুকু নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি। অন্যরা কী করছে, সে ব্যাপারে আমিতো দায় নিতে পারি না। তিনি বলেন, যেভাবে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলেছে, যন্ত্রাংশের দামও বাড়ছে। এ ব্যাপারে আমরা বিআরটিএ চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছি, দ্রব্যমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া নির্ধারণ করার জন্য। বিআরটিএ আমাদের সাথে বসবে কথা দিয়েছিল। কিন্তু বসে নি। ভাড়াও সমন্বয় করা হয় নি। ইতোমধ্যে সিএনজির দাম চার বার বাড়ানো হয়েছে। সেই হিসেবে মালিকের জমা ও গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করা হলে এ সমস্যা হতো না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০২৩ সালের এসএসসি পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, এগোবে পরীক্ষাও
পরবর্তী নিবন্ধগণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় প্রধান প্রতিবন্ধক বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী