সামনে করুণ পরিস্থিতির শঙ্কা

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:১২ পূর্বাহ্ণ

লকডাউনেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মহামারী পরিস্থিতি করুণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১০ দিনে প্রায় এক লাখ কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড গড়ার প্রেক্ষাপটে অধিদপ্তর বলছে, এই ধারা চলতে থাকলে এক সপ্তাহ পর আর কোনো আইসিইউ ফাঁকা পাওয়া যাবে না। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
গতকাল রোববার ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন এই আশঙ্কা প্রকাশের দিনই দেশে করোনার রোগী সংক্রমণ ও মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়। এদিকে চলমান বিধিনিষেধ ফের বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মহামারীর বছর গড়ানোর পর এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা মোকাবেলা করছে। ভারতে উদ্ভূত করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্থানীয় সংক্রমণ ঘটার পর গত মার্চের শেষ ভাগ থেকে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় এপ্রিল থেকেই নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে বিধিনিষেধ দিয়েও ফল না আসায় গত ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।
ডা. রোবেদ বলেন, সংক্রমণ এখনও বেড়েই চলেছে। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, হাসপাতালের সমস্ত খালি বেড পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে। তখন সবাই মিলে বিপদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে। জুন মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্তের পর জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে তা প্রায় ১ লাখ বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সব জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। শনাক্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বতর্মানে দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের ঘরে আছে। এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৪ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
সংক্রমণ বাড়ার কারণে জেলা, উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ প্রচণ্ড বেড়েছে। অনেক রোগীকে বাঁচাতে আইসিইউ লাগছে, এই মুহূর্তে যার স্বল্পতায় ভুগছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতি চললে হাসপাতালে শয্যা সংকট তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ডা. রোবেদ বলেন, ৭ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে যেতে পারে, যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। কারও কারও আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
এখন ঢাকায় মাত্র ১৮শর মতো শয্যা খালি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই সংখ্যাগুলো খালি দেখাবে না। বতর্মানে মাত্র ২১৮টি কোভিড আইসিইউ খালি আছে। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১ সপ্তাহ পর আর কোনো আইসিইউ বেড খালি থাকবে না।
মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর যে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আছে, তার মাধ্যমে মৃত্যু শুধু বয়স্ক মানুষের হচ্ছে না, তরুণদেরও হতে পারে। কেউ কোভিড-১৯ থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু তারপরও অনেকেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা করছেন।
বিধি-নিষেধ বাড়তে পারে : আগামী ১৪ জুলাইয়ের পর চলমান বিধিনিষেধ ফের বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা জানান। এ বিষয়ে আজ সোমবার রাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ১৪ দিনের সুফল আমাদের ধরে রাখতে হবে। তবে, যে পরিমাণ রোগী বাড়ছে তাতে বিধিনিষেধ এ মুহূর্তে তুলে নেওয়া হয়ত সম্ভব হবে না। তবে আগামী দুদিনের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাবে। ঈদ এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে কিছুটা শিথিলতা থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেকর্ড গড়া তৃপ্তির জয়
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল আজহা ২১ জুলাই